মো: রেজাউল করিম মৃধা: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন,আশা করেন- খ্রিস্টমাসের পূর্বেই কভিড-১৯ বা করোনাভাইরস মহামারি নিয়ন্ত্রনে আসবে এবং পরিবার ও আত্বীয় স্বজন মিলে খ্রীস্টান ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব খ্রিস্টমাস পালন করতে পারবেন।
ব্রিটেনের গবেষকদের (এসএজিই) গ্রুপের মিটিং থেকে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর এই আশা পূর্ন করতে হলে এখন থেকেই সবাইকে মানুষিক , শারীরিক এবং অভ্যাসের পরিবর্তন আন্তে হবে।
১/ বারবার হাত ধূইতে হবে।
২/ মুখে মাক্স ব্যাবহার করতে হবে।
৩/ সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে।
সেই সাথে সরকারি বিধিনিষেধ বা নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে।
সবাইকে শতর্কতা সাথে চলতে হবে।
যদিও প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা।
পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ।
এবার সরকার করোনাভাইরস আক্রান্তের উপর নির্ভর করে ট্রাফিক লাইটের মত তিনটি জোনে ভাগ করেছে।
তিন স্তরের শতর্কতা।
১/ টিয়ার -১ বা গ্রীন।
২/ টিয়ার -২ বা হলুদ বা আম্বার এবং
৩/ টিয়ার-৩ বা লাল।
১/ টিয়ার-১ বা গ্রীনে অনেকটা সুবিধা জনক অবস্থা থাকলেও
ক/ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
খ/ ৬ জনের বেশী একত্রিত হওয়া যাবে না।
গ/ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাওয়া ।
২/ টিয়ার-২ বা হলুদ কিম্বা আম্বার মাঝামাঝি ।এখানে সবাইকে অতি সতর্ক থাকতে হবে।
ক/ সামাজিক বা আত্বীয় যোগাযোগ বন্ধ।
খ/ অন্য বাড়াতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তেমনি অন্যকে আপনার বাড়ীতে আসতেও নিষেধ করতে হবে।
গ/ এমন কি বাড়ীর বাগানেও কারো সাথে যোগাযোগ নিষধ।
ঘ/ কেয়ার হোমে ও যাদের আত্বীয় বা পরিবারের কেউ থাকলে কম যাতায়াত করতে হবে।
৩/ টিয়ার-৩ বা লাল এডিয়ায় যাকে রেড সিগনাল নামে চিন্হিত করা হয়েছে।
ক/ রাত ১০টার পর পাব, রেস্টুরেন্ট বন্ধ।
খ/ বিবাহ বা ওয়েডিং পার্টিতে সর্বোচ্চ ১৫ জন এবং
গ/ জানাজা বা ফুনেরালে সর্বোচ্চ ৩০ জন একত্রিত হতে পারবেন।
ঘ/ মসজিদ বা উপাসনালয় খোলা থাকবে। তবে সরকারি বিধিনিষেধ বাধ্যতামূলেক ভাবে পালন করতে হবে।
তিন স্তরের শতর্কতা।
১/ টিয়ার -১
২/ টিয়ার -২
৩/ টিয়ার-৩
টিয়ার -৩ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ।
এরই মধ্যে সাউথ ইয়ার্কশায়ার,গ্রেটার ম্যানচেস্টার,লিভার পুল সিটি রেজন এবং লাংরাস্সায়ারে টিয়ার -৩ এর ভয়াবহতা চলছে।
এরই মধ্যে পাশের আত্বীয়ের বাসায় যাওয়া তো দূরের কথা। পাশের বাসায় যাওয়া ও নিষিদ্ধ।
অনেক স্থানেই পাব, ক্যাসিনো, রিংগো হল, ট্রাভেল এডিয়া সহ বহু ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
চরম ঝুঁকিতে আছে কভেন্ট্রি, নটিংহাম , স্টক এ্যান্ড সোল।
ওয়েলসে ১৭ দিনের জন্য ন্যাশনাল লক ডাউন ঘোষনা করা হয়েছে।
ওয়েলসের ফাস্ট মিনিস্টার -মার্ক ডার্কফোর্ড বলেন,”আগে মানুষের বা জনসাধারনের জীবন বাঁচাতে হবে, পরে খ্রিস্টমাস জীবনই যদি না বাঁচে তবে কিসের খ্রীস্টমাস, জনসাধারনের জীবন রক্ষাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য,”।
ওয়েলসের হেল্থ মিনিস্টার ভাওগান গেটিং বলেন, “উৎসব পালনের চেয়ে জনগনের জীবন বাঁচানো আমাদের
প্ধান দায়িত্ব । ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে সাময়ীক ভাবে হয়তো ক্ষতি হবে ।তবে বৃহত্ত স্বার্থে সকল জনসাধারন কে সরকারি সকল বিধিনিষেধ ও নিয়ম মেনে চলতে হবে,”।
অন্যদিকে স্কটল্যান্ডে চলছে টিয়ার -৫। নভেম্বর থেকে টপ লেভেলের লক ডাউন দেওয়া হবে।
ব্রিটেনে করোনা সংক্রমন ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির ফলে লন্ডনে দ্বিতীয়স্তরের করোনা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছ।এমন ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। স্বাস্থমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সকলকেই যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখা উচিত। লন্ডনে যে সকল বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা হলো পাব-রেস্তোঁরা বন্ধ এবং বিভিন্ন হাউজ হোল্ডে পরিবারের মধ্যে মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, লন্ডনবাসী আরো কড়াকড়ি দেখতে চায় না। তবে মানুষের সুরক্ষায় জন্য এটি প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, শীতে খুব কঠিন সময় পার করতে হবে।এ জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখতে হবে।
ব্রিটেনের চীফ মেডিক্যাল অফিসার ক্রীস হুইডি বলেন, “যেখানে মানুষের বেশী আনাগোনা সেখান থেকেই এই করোনাভাইরস সংক্রামন হয়। মানুষের শ্বাসপ্রশ্বস ও হাঁসি কাশির মাধ্যমে এই রোগ একজন থেকে অন্য জনে ছড়ি পরে। তাই সবাইকে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে চলতে হবে,”।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় ইংল্যান্ডে রাত ১০টার পর রেস্টুরেন্ট, টেইকওয়ে, পাব বন্ধ করার ঘোষনা করে সরকার। এ নিয়ম যথাযথ ভাবে পালনের জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছেন।চলমান নিয়ম ভেঙ্গে মাত্র ৪ মিনিট দেরিতে সার্ভিস করায় ইস্ট লন্ডনের একটি টেইওয়েকে ১০০০ পাউন্ড জরিমানা করেছে পুলিশ।
৩ স্থরের নতুন বিধি নিষিধের মধ্যে পাব রেস্টুরেন্ট বন্ধের পাশাপাশি সারা রাত্রি বাড়ির বাইরে থাকা নিষিদ্ধ হচ্ছে, বাড়ীর বাইরের করো সাথে দেখা করা যাবে না বা অন্য বাড়ীর লোকজন নিজের বাড়ীতে আনা যাবে না ( হাউজহোল্ড মিক্সিং নিষিদ্ধ)। এছাড়া একেক এলাকায় একেক ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আশাবাদের সাথে আমরাও আশাবাদী আগামী খ্রীস্টমাসের আগেই যেন করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রে আসবে। ফিরে পাবে আবার স্বাভাবিক জীবন।করোনা মুক্ত এক সুন্দর পৃথিবী।