কাঁচা-পাকা ধানের ডগায় আলগোছে পা ফেলে নামছে শিশির। শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা চারিদিকে বয়ে চলেছে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা আমন ধান। মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়। সে কাজেই ব্যস্ত মৌলভীবাজারের কৃষকেরা। মাঠে মাঠে পাকা ধানের সোনালি আভা, পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে প্রকৃতি ভারি হয়ে ওঠে। দিগন্ত-বিস্তৃত ফসলের বাহারি রূপ এক অনন্য সৌন্দর্যের পরির দেশে নিয়ে যায়। এর পরপরই আসে ধান কাটার ধুম। মাঠে মাঠে আরেক উৎসব। কৃষ্ণকায় আর জীর্ণদেহী কৃষকের লাল-সাদা দাঁতের হাসি আবহমান বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যেরই বহিঃপ্রকাশ। ধান কাটে মনের সুখে। আর হরেকরকম গানে মেতে ওঠে কৃষক। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সিতাশ্রী গ্রামের কৃষক মো. জমিল মিয়া আইনিউজে বলেন, এই বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুরূপভাবে আশপাশের গ্রামেও ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ করণে ধান রোপন করার সময় জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা নিয়েছিল । যার কারণে সময় মত ধান রোপন করা যায়নি । যার করনে পাকা ধান ঘরে তুলতে সময় লাগবে। অন্যান সময় বছরের এই সময় প্রায় অর্ধেকের মত ধান কাটা শেষ হয়ে যেত। কৃষক লছন মিয়া বলেন, এই বছর ভাল ধান হলেও কৃষকেরা ধান সংগ্রহ করতে পারবে না। কারণ এই বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টির করণে ধানের গাছ লম্বা হয়ে গেছে, ধানের গাছ গুলো মাঠিতে পড়ে গেছে। তাই কাটতে অনেক সমস্য হবে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার সদরে ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৭ হাজার ২৯৫ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হাজার ১৯০ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৬৭০ হেক্টর এবং জুড়িতে ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টরসহ মোট এক লাখ ১৪৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে মৌলভীবাজার সদরে ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর, রাজনগরে ১২ হাজার ৬১৩ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর এবং জুড়িতে ৮ হাজার ৪৪৭ হেক্টরসহ মোট এক লাখ ১৫০ হেক্টর জমিতে । মৌলভীবাজার কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় রোপা-আমন আবাদের জমির পরিমান ছিল ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় ২০০ হেক্টর জমির আবাদের পরিমান বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কান্তি দত্ত বলেন, গত বছরের তুলনায় ২০০ হেক্টর জমির আবাদের পরিমান বেড়েছে। কৃষক এখন তার ধান কাটা শুরু করেছে । ধান যতা সময়রে রোপন করা হয়েছে এখন যতা নিয়মে ধান কাটা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগামি রবি মৌসুমে আমরা নতুন ফসল চাষ করবো এর মধ্যে সূর্যমূখী, ভুটা, সরিষাসহ কিছু নতুন ফসল চাষ জন্য বীজ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনার সহায়ার আওয়ায়।