ছবি নির্মাণের অধম্য নেশায় পা বাড়ান রূপালি ভূবনে। প্রথম ছবি হিসেবে নির্মাণ করেন ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা অবলম্বনে এটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। এর জন্য জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। বলছিলাম, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা মাসুদ পথিকের কথা। বিরতি দিয়ে এরপর তিনি নির্মাণ করেন ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ ছবিটি। ছবিগুলো নির্মাণ করতে গিয়ে হারাতে হয়েছে পৈতৃক সম্পত্তির সাড়ে চার বিঘা জমি।
মাসুদ পথিক বলেন, ‘ছবি নির্মাণের নেশা নিয়েই এ পথে যাত্রা শুরু করি। আমার প্রথম ছবি ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ সরকারি অনুদানের ছবি। কিন্তু যে টাকা অনুদান হিসেবে পেয়েছি, তাতে ছবির ১৫ শতাংশের কাজও হয়নি। ছবির কাজ শেষ করতে ঋণ নিতে হয়েছে। এরপর সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে গ্রামের পৈতৃক কিছু সম্পদ ছাড়তে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই ঘটনা হয়েছে দ্বিতীয় ছবি নির্মাণের বেলায়। সেখানেও অনুদান হিসেবে যা পেয়েছি, তাতে ছবির তেমন কিছুই দাঁড়ায়নি। এরপর জমি বিক্রি করে পুরো ছবির কাজ শেষ করতে হয়েছে। দুই ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে ১১ বছরে বাপের সাড়ে চার বিঘা সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে আমাকে। বিষয়টি মনে হলে এখনও কষ্ট লাগে।’
‘একজন নির্মাতা বহু টাকা খরচ করে ছবি নির্মাণ করে থাকে। কিন্তু ফল হিসেবে তিনি কি পান? স্বীকৃতি! জীবন চলতে অর্থের প্রয়োজন। আমি প্রথম ছবি নির্মাণ করে স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ ও বিদেশি ১৪ টি পুরস্কার পেয়ছি। আর “মায়া: দ্য লস্ট মাদার” ছবিটি ১৬টি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছে। চারটি পদকও জিতে নিয়েছে। কিন্তু হারিয়েছি অর্থ ও আগ্রহ। যে টাকা খরচ করে ছবি নির্মাণ করা হয়, বর্তমানে তার চার ভাগের এক ভাগও উঠে আসে না। এভাবে ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে আমার মতো অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে’ বললেন মাসুদ পথিক।
চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত এবং সরকার যেন এই শিল্পের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি অনুদান বাড়ানো হয়েছে। এটা এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক। ভালো একটি ছবি নির্মাণ করতে গেলে টাকা অংকটাও বাড়াতে হয়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ছবি নির্মাণে যে অর্থ লগ্নি করতে হয়, তা তুলতে সিনেমাহল ও প্রচার মাধ্যমগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। অথচ আমরা ছবি চালানোর জন্য হল পাইনা। ছবি মুক্তির সময় অন্যান্য মাধ্যম থেকেও সাড়া মেলে না। ফলে লগ্নিকৃত অর্থ তোলা সম্ভব হয়না। এই বিষয়গুলো একটু গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। তাহলেই সিনেমার সুদিন ফিরবে।’