বল নিয়ে ছুটছেন জামাল ভুঁইয়া, তালে তালে দর্শকদের গগণ বিদারি গর্জন। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এমন দৃশ্য দেখেনি বিশ্ব ফুটবল। মাঠে খেলেছেন লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা নেইমার জুনিয়রের মতো তারকা ফুটবলাররা। কিন্তু তাদের খেলা হয়েছে ফাঁকা গ্যালারিতে, কৃত্রিম আওয়াজে।
চ্যাম্পিয়নন্স লিগের ফাইনাল কিংবা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচসহ কত খেলাই না হয়েছে। সবই দর্শক ছাড়া। সেই কাজ করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আরও খোলাসা করে বললে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বাংলাদেশই প্রথম দেশ যারা দর্শক নিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরু করেছে। বিষয়টি ভালো নাকি খারাপ হয়েছে, সেই হিসেব পরে আসবে। কিন্তু বাফুফে দুঃসাহস দেখিয়েছে। দর্শকের গর্জন নিয়েই ফিরিয়েছে ফুটবল। ফুটবলাররাও দিয়েছেন প্রতিদান। দুই প্রীতি ম্যাচের প্রথমটিতেই জামাল ভুঁইয়ারা দুর্দান্ত ফুটবল খেলে নেপালকে ২-০ হারিয়ে দিয়েছে। লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা এগিয়ে যায় ম্যাচের শুরুতেই। ১০ মিনিটের মাথায় সাদ উদ্দিনের ক্রস ধরে বল পেয়েই দ্রুত জালে জড়িয়ে বাংলাদেশকে গোল এনে দেন মিডফিল্ডার নবীব নেওয়াজ জীবন।
প্রথমার্ধে আর গোলের দেখা পাননি জেমি ডের শিষ্যরা। তবে খেলেছেন দুর্দান্ত। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছিল ফুটবলারদের। জামাল ভুঁইয়া উঠেই যান। তবে সময় গড়াতে গড়াতে আক্রমণের পসরা সাজায় বাংলাদেশ। প্রথম গোলের পর দ্বিতীয় গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭০ মিনিট। গোলটি ছিল দৃষ্টিনন্দন। নেপালের ডি-বক্সের একটু আগেই ক্রস থেকে বল পান বদলি হিসেবে নামা সুফিল। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গিয়ে নেপালের রক্ষণভাগের ফুটবলারদের বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে বল জড়ান জালে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠে পুরো গ্যালারি।
ঘরের মাঠে খেলা মানেই দর্শকদের উল্লাস কিংবা গর্জন। কিন্তু করোনা আমাদের এটা ভুলিয়ে দিয়েছিল। সারা বিশ্বেই খেলা শুরু হয়েছে, তবে দর্শক বিহীন। জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে খেলা আয়োজন করতে গিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছিল দর্শকদের। বাংলাদেশ সেদিক থেকে ব্যতিক্রম। দর্শক নিয়েই ফিরিয়েছে ফুটবল। প্রায় আট হাজার দর্শক আজ মাঠে উপভোগ করেন জামালদের খেলা। এর আগে প্রায় সাড়ে আট মাস আগে এই মাঠে খেলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ ওই ম্যচে হেরেছিল বুরুন্ডির বিপক্ষে।
শেষবার এই মাঠে বাংলাদেশ হেরেছিল। করোনা বিরতির পর জয় দিয়েই প্রত্যাবর্তন হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ম্যাচের আগে ফিটনেস নিয়ে ফুটবলারদের চিন্তা থাকলেও ম্যাচে এমন কিছু দেখা যায়নি। আগামী ১৭ নভেম্বর এই মাঠেই একই সময়ে খেলতে নামবে দুই দল।
নেপালের বিপক্ষে এর আগে দুবারের দেখায় হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। প্রথম ম্যাচে জিতে একধাপ এগিয়ে গেছে জামালরা। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতলেই ষোলো কলাপূর্ণ হবে।
বাংলাদেশ একাদশ : আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান রাফি, রবিউল হাসান, জামাল ভুঁইয়া (অধিনায়ক), মানিক হোসেন মোল্লা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাদ উদ্দিন, সুমন রেজা।
নেপাল একাদশ : অজিত ভান্ডারি, অনন্ত তামাং, বিকরাম লামা, তেজ তামাং, অঞ্জন বিস্তা, সুজল শ্রেষ্ঠ, কিরান কুমার লিমবু (অধিনায়ক), সুমন আরিয়াল, নাওয়ায়ুগ শ্রেষ্ঠ, রভিশংকর পাসওয়ান, নিকাশ খাওয়াশ।