স্বাদ হারানো, গন্ধ না পাওয়া ছাড়াও করোনাভাইরাসের রয়েছে বিচিত্র সব উপসর্গ। করোনা সংক্রমণ শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে এ কথা এতদিন হয়তো সবাই জেনে গেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপরেও ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ‘অ্যাবডমিনাল রেডিওলজি’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন গবেষণা বলছে, হজমতন্ত্রের ওপর করোনার তিনটি প্রভাবকে হয়তো ভিন্ন সমস্যা মনে করে ভুল করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৮ শতাংশ করোনাভাইরাস রোগীর মাঝে হজমতন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়। ১৬ শতাংশ রোগী ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল’ সমস্যার ভোগেন। হজমতন্ত্রের সমস্যাগুলোর মধ্যে খাওয়ার রুচি হারানো, বমিভাব ও বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা এই উপসর্গগুলোই বেশি দেখা যায়। তবে কিছুসংখ্যক রোগীর মধ্যে অন্ত্রের প্রদাহ, অন্ত্রের দেয়ালে বাতাস জমা কিংবা ছিদ্র হতেও দেখা গেছে। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, ‘বাওয়েল ইনফ্লামেইশন’ বা অন্ত্রের প্রদাহ থেকে অবসাদ, পেটব্যথা, খাওয়া রুচি হারানো, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত আসা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে অন্য দুটি উপসর্গের পরিণাম আরও ভয়াবহ হওয়া সম্ভব। অন্ত্রের দেয়ালে বাতাস জমাকে বলা হয় ‘নিউমাটোসিস ইন্টেন্টিরালিস’, যেখানে পেটের একটি অংশ ফুলে ওঠে। সঙ্গে থাকতে পারে ব্যথা, ডায়রিয়া, মলের সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি। ‘বাওয়েল পার্ফোরেশন’ বা অন্ত্রের দেয়াল ছিদ্র হয়ে গেলে রোগীর থাকবে জ্বর, কাঁপুনি, প্রচণ্ড পেটব্যথা, বমিভাব ও বমি। হজমতন্ত্রের ভেতরের কোনো উপাদান বাইরে বেরিয়ে এলে তা সৃষ্টি করবে ‘সেপসিস’, যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। এগুলো ছাড়াও ‘কোভিড ১৯-এর আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে। আসুন জেনে নিই যেসব উপসর্গ সম্পর্কে- ১. মানসিক কার্যক্ষমতায় মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াই হলো ‘ডেলিরিয়াম’। এ ক্ষেত্রে মানুষ প্রচণ্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানেই এই উপসর্গ দেখা দেয়। ২. স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি হারানো করোনার সবচাইতে বেশি চোখে পড়া উপসর্গ। তবে একই ইন্দ্রিয়ের ওপর ভিন্ন প্রভাবও দেখা গেছে করোনাভাইরাসের। ৩. ত্বকে র্যাশ ও জালাভাব হলে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ৬০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে যে রোগীর মাঝে করোনা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে যাদেরই ত্বকে ‘রেটিফর্ম পারপুরা’ নামক জালের মতো দেখতে র্যাশ দেখা দিয়েছে, তাদের শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ৪. এই ভাইরাস আপনার ঘুম কেড়ে নিতে সক্ষম। করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা অনেকেই বলেছেন তাদের ঘুমের সমস্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ৩৬টি গবেষণা পুনঃবিশ্লেষণ করে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবার্টার ‘ডিপার্টমেন্ট অফ রেডিওলজি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ইমেজিং’।