বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান সুভাষ চন্দ্র সাহা। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এলসেভিয়ার প্রকাশনা সংস্থার (আইসিএসআর ল্যাব) সমন্বিত জরিপে বিশ্বসেরা দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজী সিডনী’র মেকানিকেল অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।
ড. সুভাষ চন্দ্র সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকা প্রকাশ করে।
প্রকাশিত তালিকায় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষনায় নিযুক্ত বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা সম্মানজনক এই তালিকাটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বিজ্ঞানী সুভাষ চন্দ্র সাহা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের খোর্দবাঁটরা গ্রামের মৃত অজিত সাহার ছেলে।
মা নির্মলা সাহা ও ভাই স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী সত্য সাহা জানান, পরিবারে চার ভাই এক বোনের মধ্যে সুভাষ চতুর্থ। কৃষক পরিবারের সন্তান সুভাষ চন্দ্র সাহা ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ও ফলিত গণিতে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি বাস্তবজীবন এবং প্রকৌশল শিল্পে গণিতের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী ছিলেন। এই আগ্রহ থেকেই তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে গবেষণা শুরু করেন। তার তৎকালীন গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক এবং প্রকৌশল জার্নালগুলোতে প্রকাশিত হয়।
এদিকে অদম্য মেধাবী ড. সুভাষ চন্দ্র সাহা গবেষণার পাশাপাশি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০০৯ সালে আস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. সাহা তার এই স্বল্প কর্মময় জীবনে প্রায় দুইশ’র অধিক আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং বহু আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল সম্মেলনে অংশগ্রহন করেছেন। তিনি তিনটি অন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্রের পুরষ্কার অর্জন করেছেন।
গবেষণার মানের ওপর ভিত্তি করে তিনি আস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু সরকারি মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা অনুদানে পুরস্কৃত হয়েছেন। যেমন অস্ট্রেলিয়ান রিসার্স কাউন্সিল লিঙ্কেজ, ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ডিফেন্স ইনোভেশন নেটওয়ার্ক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি, ইনোভেশন অ্যান্ড সায়েন্স ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি ন্যাশনাল নিউট্রাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন অব চায়না থেকে তিনটি সম্মানজনক গবেষণা অনুদান পেয়েছেন।
ড. সাহার তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ১২ জন ছাত্রছাত্রী পিএইচডি এবং দুজন এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যাদের মধ্যে চারজনকে তিনি প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে সরাসরি সুপারভাইজ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি মেধাবী ছাত্রকে স্কলারশিপসহ অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি, যাদের মধ্যে দুজন পিএইচডি শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনিতে শিক্ষকতা ও গবেষণায় সম্পৃক্ত রয়েছেন।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বহু গবেষকের সঙ্গে কলাবরেশন করছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি প্রধান বক্তা হিসেবে অনেক বৈজ্ঞানিক বক্তব্য দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনেকগুলো কলাবরেটিভ প্রোজেক্টে কাজ করছেন।
বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন রিসার্স-টিম, ফ্লুইড ডাইনামিক্স এবং কম্পিউটেশনাল বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন শাখায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার গবেষণার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল ফুসফুসের সাথে দূষিত বা ওষুধ কণিকার মিথষ্ক্রিয়ার মডেল, রক্ত কণিকার বিকৃতি ও প্রবাহ, বিভিন্ন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তাপের পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণের মডেলসহ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন প্রয়োগ ক্ষেত্র।
কলারোয়ার কৃতি সন্তান ড. সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি দেশের কল্যাণে যেন কিছু করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’