যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ফার্মা জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পর্যালোচনায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। গবেষণাটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে মেডিসিন জার্নাল দ্য ল্যানসেটে। গবেষকরা বলছেন, করোনা মহামারিতে এই সফলতার বড় ধরনের প্রভাব থাকবে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এটিই প্রথম পিয়ার-রিভিউড বিশ্লেষণ। বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করছেন। তাদের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন পাবে।
যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলে প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন। পরীক্ষার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এটি ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকর। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যে গোষ্ঠী দুটি ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকারিতার হার ৬২ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত যে গোষ্ঠী প্রথমবার অর্ধেক ডোজ এবং পরে পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকারিত ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ছুঁয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের পরিচালক ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক অ্যান্ড্রিউ পোলার্ড বলেন, আজ আমরা চূড়ান্ত পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যবর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। এতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতা ভালো।
পোলার্ড আরও বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। তারা এই মাইলফলক অতিক্রম করার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে গত আট মাস কাজ করেছেন।
খবরে বলা হয়েছে, এই ভ্যাকসিনটির উৎপাদনে খরচ কম এবং অল্প ব্যয়ে বিপুল সংখ্যক ডোজ উৎপাদন করা যাবে। ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের মতো এটিতে অতিরিক্ত শীতল তাপমাত্রায় রাখতে হবে না।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট প্রতিবেদন প্রকাশের দিনকে ‘সম্ভবত ২০২০ সালের সেরা দিন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে একাধিক প্রয়োগে ভ্যাকসিনটি কার্যকর বলে দেখা গেছে। এখন আমরা স্পষ্টভাবে কার্যকারিতা প্রমাণ পেয়েছি পিয়ার-রিভিউড প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায়।
সারাহ গিলবার্ট আরও বলেন, এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যালোচনা বাকি। আমরা আশা করছি দ্রুতই ভ্যাকসিনটি মানুষের জীবন বাঁচানো শুরু করবে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলছে। এছাড়া ভ্যাকসিনটিতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করবে, ভ্যাকসিনের কয়টা ডোজ নিতে হবে। যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দশ কোটি ডোজ কেনার অর্ডার দিয়ে রেখেছে।