ব্রিটেনে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস ‘সত্যিকারের উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে হাজির হলেও এখন পর্যন্ত ওই পরিবর্তিত ভাইরাসের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কার্যকর রয়েছে। তবে বৈশিষ্ট্যে আরও পরিবর্তন আসলে ভ্যাকসিন কার্যকারিতা হারাতে পারে; এমন আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
বিবিসির স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিনিধি জেমস গ্যালাঘার বলছেন, এখন পর্যন্ত যে তিনটি ভ্যাকসিন এসেছে, তাদের সবগুলোই বর্তমানে থাকা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের অধ্যাপক রাভি গুপ্তাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলছেন, ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিভিন্ন অংশকে আক্রমণ করতে উদ্দীপ্ত করে। আর তাই এর কিছু অংশ যদি পরিবর্তিত হয়েও থাকে, তারপরও ভ্যাকসিনটির ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কাজ করার কথা।
‘কিন্তু যদি আরও বেশি পরিবর্তন বা বিভাজন ঘটতে দেয়া হয়, তাহলে তখন দুঃশ্চিন্তা করতেই হবে,’ বলেন অধ্যাপক গুপ্তা। তার মতে, “ভাইরাসটি এমন একটি পথে রয়েছে, যেখানে হয়তো সে ভ্যাকসিন এড়িয়ে যেতে পারে। আর সেদিকেই কয়েক কদম এগিয়েছে ভাইরাসটি।”
ভ্যাকসিন এড়ানোর মানে হচ্ছে, ভাইরাসটি পরিবর্তিত হচ্ছে, যার কারণে ভ্যাকসিন পুরোপুরি কার্যকর হয় না এবং ভাইরাসটি তখন মানুষকে সংক্রমিত করা অব্যাহত রাখে। আর এখন ভাইরাসটি যে অবস্থায় আছে তাতে এই বিষয়টিই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে। ভাইরাসটির নতুন বৈশিষ্ট্য এটা জানান দিচ্ছে যে, এটি যতই মানুষকে আক্রান্ত করছে, ততই খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন শুক্রবার বলেছেন: “এই ভাইরাসটি সম্ভবত নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করবে, যাতে সে ভ্যাকসিন এড়াতে পারে।” এটা আমাদেরকে অনেকটা ফ্লু’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের জায়গাটিতে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ নিয়মিতভাবে ভ্যাকসিনের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
মেডিক্যাল রিসার্স চ্যারিটি ওয়েলকাম ট্রাস্টের পরিচালক জেরেমি ফারার এক টুইটে বলেছেন, এর অস্তিত্বের প্রশ্নটি এখনও উদ্বেগের এবং তা উৎকণ্ঠিত হওয়ার সত্যিকারের কারণও বটে। ফারার আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরও বেশি করে জানার জন্য গবেষণা চলছে। তবে এখনই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজটা সহজ নয়। যুক্তরাজ্য ও বিশ্বজুড়ে এমন কোনও জায়গা নেই, যাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার উপায় রয়েছে। অনেক দেশেই পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় আছে।’
কোভিড-১৯ জিনোমিকস ইউকে (সিওজি-ইউকে) কনসোর্টিয়াম বলছে, প্রথমবার ছড়িয়ে পড়ার পর ওই ভাইরাসের মিউটেশন হবে কিনা তা নিয়ে আভাস দেওয়া কঠিন। তবে রূপান্তরিত সে ভাইরাস যদি পুনঃসংক্রমণের হার বাড়ায় কিংবা ভ্যাকসিনের অকার্যকারিতা তৈরি করে, তবে তা বড় উদ্বেগের কারণ।
অবশ্য, অধ্যাপক হুইটি বলছেন, ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন ভ্যাকসিন কিংবা চিকিৎসার ওপর প্রভাব ফেলছে বলে এখন পর্যন্ত আলামত পাওয়া যায়নি। হুইটি মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তবে তা হবে ‘বিস্ময়কর’। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।
বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফেডেরিকো জিয়োরগি কোভিড-১৯ এর স্ট্রেইন নিয়ে একটি গবেষণায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবশ্য অন্যভাবে ভাবছেন। সায়েন্স ডেইলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সার্স কভ-২ করোনাভাইরাস সম্ভবত এরইমধ্যে মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ কার্যকারিতা দেখিয়ে ফেলেছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, এর বিবর্তনমূলক পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। এর মানে হলো আমরা ভ্যাকসিনসহ যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করছি তা ভাইরাসের সব স্ট্রেইনের বিরুদ্ধেই কার্যকর হবে।’