বৃটেনের প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অর্থাৎ ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালগুলো তাদের ধনী ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত কল পাচ্ছে, যারা অগ্রাধিকাপ্রাপ্তদের তালিকা ডিঙ্গিয়ে যেতে ২০০০ পাউন্ড দিতেও রাজী।
করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ পাওয়ার জন্য লাফ দিয়ে অপেক্ষমানদের তালিকার আগে যেতে হাজার হাজার পাউন্ড দিতে প্রস্তুত রয়েছে বৃটেনের ধনী ব্যক্তিরা।
বর্তমানে এনএইচএস ছাড়া করোনার এই টিকা পাওয়ার আর কোন বিকল্প নাই। এটা জানা সত্বেও শত শত ধনী রোগী তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ফোন করে জানতে চাচ্ছে কিভাবে তারা এই টিকা পেতে পারে।
চেশায়ারের উইমসলো এলাকা অবস্থিত দক্ষিণ ইংল্যান্ডের কোটিপতিদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ‘কিলিনিক’ নামের প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিক ড. রোশন রভিন্দ্রন টাইমস অনলাইনকে বলেছেন, আমাকে আমার একজন রোগী ফোন করে বলেছেন, তিনি ভ্যাকসিনের জন্য২ হাজার পাউন্ড দিতে প্রস্তুত আছেন।
তিনি বলেন, “যারা বার বার ফোন করে ভ্যাকসিনের খোঁজ নিচ্ছেন, তাদের কোন না কোন আত্মীয় কোভিড-১৯ এ মারা গেছে। ভাইরাসটি সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য করেনা। ধনী গরীব বাছ বিচার না করেই সবাইকে সমানভাবেই সংক্রমিত করছে এবং সবক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা দিয়েছে। তাই লোকজন এখন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে ওঠছে।
তবে রবীন্দ্রন বলেছেন, তিনি এবং অন্যান্য প্রাইভেট চিকিৎসকরা তাদের ধনী ক্লায়েন্টদের বলেছেন, তাদেরকে অপেক্ষা করতেই হবে। তাঁর ভাষ্য, “এটা খুবই অমূল্য। আমার কাছে সীমাহীন অর্থ-বিত্তের মানুষ রয়েছেন, যা একটি ভ্যাকসিনের জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত আছেন, কারণ তাদের অনেক আত্মীয় কোভিডে মারা গেছেন।”
সরকারের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে য্ক্তুরাজ্য এ পর্যন্ত ৭টি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল ভ্যাকসিনের ৩৫৫ মিলিয়ন ডোজ আগাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বায়োএনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিনের ৪০ মিলিয়ন ডোজ, অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ। এছাড়া মডার্নার ৫ মিলিয়ন ডোজ, জ্যানসেন এর ৩০ মিলিয়ন ডোজ, গ্লাস্কোস্মীথ/স্যানোফি, পাসটোর, ভালনোভা এবং নভাভ্যাক্স এর কাছ থেকে ৬০ মিলিয়ন করে মটো ২৪০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছে সরকার।
ড. রবীন্দ্রন বলেন, “এই মুহুর্তে প্রতিটি ভ্যাকসিন বা টিকা কিনে নিয়েছে সরকার।” তবে এমনটা চিরদিনের মতো হবে না। বিভিন্ন কোম্পানীর ভ্যাকসিন খুব কম সময়ের মধ্যেই চলে আসবে যা আগামী মাস ছয়েকের মধ্যেই প্রাইভেটলি অর্থাৎ বেসরকারি পর্যায়েও সহজলভ্য হয়ে পড়বে।
ড. রবীন্দ্রণ বলেন, আমরা সম্ভবত আগামী এপ্রিল থেকে প্রাইভেট সাপ্লাই পেতে শুরু করবো। কোম্পানীগুলো এমন ভ্যাকসিন নিয়ে আসবে, যা সরকার কিনে না, এবং তা বাজারে সয়লাব হয়ে যাবে। প্রতিটি ড্রাগ কোম্পানী ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে আসতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে।
রবীন্দ্রণ আশংকা করছেন যে, যে যখন বেসরকারী ভ্যাকসিনগুলো পাওয়া যাবে, তখন কেউ কেউ একটি টিকার জন্য ১০ হাজার, ১৫ হাজার কিংবা ২০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত প্রিমিয়াম প্রাইজ চার্জ করতে পারে।
বেসরকারী হারলে স্ট্রিট ক্লিনিকের ডিরেক্টর, ড. মার্ক আলীও প্রতিদিন তার উদ্বিগ্ন ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন চেয়ে অসংখ্য কল রিসিভ করছেন।
সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ লোকজনকে এনএইচএস এর মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যাপকভাবে টিকাদান এবং এনএইচএস এর ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ হ্রাসে প্রাইভেট সেক্টর সাহায্য করতে পারে।
ডা. আলীর মতে, “বয়স্ক এবং দুর্বল লোকজন সবার আগে ভ্যাকসিন পাওয়াটা সবচেয়ে জরুরী। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সর্বস্তরে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় প্রাইভেট প্র্যাকটিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট অব দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডক্টরস্ ফেডারেশন, ডা. নীল হাটন বিশ্বাস করেন যে, ভ্যাকসিনগুলো খুব শিগগিরই প্রাইভেটলি পাওয়া যাবেনা। তিনি বলেন, আমরা এখন জাতীয় জরুরী অবস্থায় আছি। এমন অবস্থায় যদি কিছু লোক পয়সা দিয়ে লাফ দিয়ে অপেক্ষমান লাইনের আগে চলে যায়, তাহলে সারা দেশজুড়ে চিৎকার শুরু হবে।
“আমরা খুবই স্পষ্ট করে বলছি যে সিস্টেমের চারপাশে কোনধরনের উপায় খোলা নেই, যা শুনে কেউ কেউ মাঝে মাঝে ভিষন বিরক্তবোধ করছে।” (M.R)