ক্যামব্রিজ সিটি সবুজের সমারোহে লেজেন্ট শিক্ষা শহর হিসেবে বিশ্ব খ্যাত এবং সর্বত্র সমাদ্রীত।পৃথিবীতে যে কয়টি শিক্ষা শহর বা শিক্ষাকে কেন্দ্র করে যে সকল শহর গড়ে উঠেছে তার মধ্যে ক্যামব্রিজ অন্যতম।
৩১ টি অটোনোমাস কলেজ নিয়ে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রতিস্ঠিত। ক্যামব্রিজ শহর মানেই শিক্ষার শহর। আনাচে কানাচে শিক্ষা প্রতিস্ঠান, স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি। আর এই কলেজ ইউনিভার্সিটি কে কেন্দ্র করেই শহর গড়ে উঠা। শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যাবস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আবাসন বা হাউজিং এবং খাবারকে কেন্দ্র করে রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন সুপার মার্কেট সেই সাথে ব্যান্ডের সব দোকান নিয়ে সুপরিকল্পীত ভাবে সিটি সেন্টারের বিশাল মার্কেট।
এছাড়া রয়েছে খোলা মার্কেট । মার্কেট স্কয়ার নামে পরিচিত। যা শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের জন্য স্বল্প মূল্যে ফ্রেশ ফলমূল, শাকসব্জি , মাছ, মাংশ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার সুব্যাবস্থা।
গত ৩রা আগস্ট আমার পরিবার এবং বন্ধু শাহ আলম ভাইর পরিবার মিলে লন্ডন থেকে ছুটে গিয়েছি।ক্যামব্রিজ সিটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার জন্য। সত্যি অপূর্ব সুন্দর শহর।
লন্ডন থেকে ক্যামব্রিজের দূরুত্ব ৬৪ কিলোমিটার। বিভিন্ন পথে যাতায়াতের জন্য রয়েছে সুব্যাবস্থা । বাস,ট্রেন,কোচ এবং নিজের গাড়ী অথবা দল বেঁধে পিকনিক করতে যাওয়া। মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য এই শহর হলেও শহরটি দেখার জন্য সব বয়সী মানুষ আসেন বেড়াতে।
যে সব স্থান গুলি সব পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
অন্যতম হলো:-
মিউজিক,
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ,
কিংস কলেজ চ্যাপেল,
সিটি সেন্টার,
মার্কেট স্কয়ার,
দি গ্রেট সেন্ট মেরী চার্চ,
দি রাউন্ড চার্চ,
দি ফিটস উলিয়াম মিউজিয়াম,
গ্রান্ট আর্কেডো,
বোটানিক গার্ডেন,
দি এরেনা,
চমৎকার লেক এবং
সর্বশেষ নির্মিত সেন্ট্রাল ইকো মসজিদ সহ বহু স্থাপনা এবং সুন্দর সুন্দর পার্ক যার চার পাশে সবুজে সবুজে সারি বন্ধ ভাবে গাছ গুলি দাড়িয়ে আছে।
৩১ টি কলেজ নিয়ে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি তবে মেরী এডওয়ার্ড এবং নিউহ্যাম কলেজ দুটি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।
ট্রিনিটি কলেজ শুধু ধনীদের জন্য। অনেক ব্যায়বহুল। অক্সব্রিজে অবস্থিত। এই কলেজ এলাকায় ১১ টি সুপার মার্কেট, দি ও টু এরেনা এবং সর্ব বৃহৎ এলাকা জুডে এর অবস্থান। বর্তমান বাজার মূল্য ধরা হয় £১.৩ বিলিয়ন পাউন্ড।
আমরা ক্যাব্রিজ ইউনিভার্সিটির বিশাল মাঠের ঠিক উল্টো পাশে লেইজি সেন্টারের সাথে কার পার্কিং এ গাড়ী পার্ক করে বেড়িয়ে পরলাম ঘুরতে। হেঁটে হেঁটে মাঠ পার হয়ে বিশাল ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং। পাশে দিয়েই শহরের মূল রাস্তা একটি পাশে ই সিটি সেন্টার মার্কেট, অপর পাশে খুবই সুন্দর একটি পার্ক ঠিক মাঝখানে চারটি গেইট করা চারি পাশে ব্যান্চ এবং ফুলের সমারহ যেখানে এসে ছবি না তুললে নিজেকেই অপরাধী মনে হবে। অপর পাশে শিশুদের খেলার সামগ্রী রয়েছে আপনি ছবি তোলা নিয়ে ব্যাস্ত হলেও শিশুরা মনের আনন্দে খেলনায় চড়ে আনন্দে আত্বহারা হয়ে উঠবে।
এবার চলে আসতে পারেন শপিং সেন্টারে যেখানে রয়েছে বিশ্বের সকল ব্যান্ডের দোকান, পরিপাটি অনেকটা স্ট্রাডফোটের ওয়েস্ট ফিল্ডের মত তবে আয়োতনে কিছুটা ছোট। শপিং সেন্টার থেকে বের হয়ে বামদিকে হাঁটলেই খোলা মার্কেট, চার্চিল হল আর কিছু ক্ষন হাঁটলেই রাস্তার ডান পাশে বিখ্যাত গ্রেট সেন্ট মেরী চার্চ এবং বাম দিকে সুবিখ্যাত কিংস কলেজ চ্যাপেল। এখানে পর্যটকদের উপচে পরা ভীর। এদের মাঝেই চলছে মিউজিক যা ক্যামব্রিজের সবার প্রিয়।
সোজা হাঁটতে থাকলেই বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পস। বাহির থেকে তেমন গুরুত্ব মনে না হলেও গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে আপনার ধারনা পুরো পাল্টে যাবে। ঘুরে দেখুন।চোখ জুডিয়ে যাবে। আরো হাঁটুন সামনে এসে বামে ডুকতেই মিউজিয়াম এটা অনেক বিখ্যাত শিক্ষার জন্য জানার জন্য এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য এই মিউজিয়াম অবশ্য অনেক জরুরী।
হাঁটতে হাঁটতে সামনে এসে বামে আসুন এলেই পাবেন ক্যামব্রিজ সিটি কাউন্সিল অফিস। যেখান থেকে মেয়র, স্পীকার এবং কাউন্সিলারা মিলে পরিচালনা করেন পুরো সিটিকে।
এবার ক্লান্ত শরীরে মাঠের এক পাশে দুই পরিবারের সদস্যরা চাদর বিছিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার ছুটে চলা বোটানিক গার্ডেন দেখার উদ্দ্যোশে।
হেঁটে হেঁটে শহর ঘুরে দেখার আনন্দই আলাদা দল বেঁধে এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তা কর্নারের বিশাল চার্চ ঘরে সোজা হেঁটে চলা দুই ধরের সন্দর্য দেখা। কিছুক্ষন পরেই পেয়ে গেলাম বেটানিক্যাল গার্ডেনের গেইট। এবার কিছুটা থ খেয়ে গেলাম কেননা প্রতিজনের প্রবেশ মূল্য £৭ পাউন্ড। কি আর করা এসেছি যখন , তখন দেখতেই হবে। টিকিট কেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই মিলে। বিশাল এলাকা জুড়েই রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। গেইট থেকেই গার্ডেনের ম্যাপ নেওয়া হয়েছে । ম্যাপ দেখে দেখে এক দিক থেকে অন্য দিকে ঘুরে বেড়ানো।
আমার ছেলে এহসান কে দেওয়া হলো গাইডার সেও খুব আনন্দ পাচ্ছে। জীবনের প্রথম কোন দায়িত্ব সে গুরুত্বের সাথেই পালন করছে। পৃথিবীর সব ধরনের ফুলের এবং ফলের সেই সাথে কাঠের গাছ রয়েছে।দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি কখনো এদিক আবার কখনো সেদিক। বাঁশ ঝার, ছোট্ট আঁকাবাঁকা লেক হাঁস গুলি যেন ক্লান্ত হয়ে লেকের পাশে খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। কত পর্যটক আসছে যাচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। লেকের অপর পাশে ছোট্ট পাহাড়ের বিভিন্ন ধাপে ধাপে ঝড়নার পানি লেকে পরছে। এই সব দৃশ্য পর্যটকরা অবলোকনে তাকিয়ে দেখছে।
পাশ দিয়ে আর একটু এগুলোই বিশাল গ্রীন হাউজ। সব ধরনের ফুলের এবং ফলের গাছের চারা এখানে হয়ে থাকে আরো রয়েছে হরেক রকমের লতাপাতার এবং পাতাবাহরের গাছ। পর্যটকরা ঘুরেঘুরে দেখছে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গাছ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। বের হওয়ার কিছুটা পূর্বে পানির ঝড়না। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর নিয়ে এই ঝড়নার পাশে বেন্চে বসলে সব যেনো প্রশান্তি হয়ে উঠে।
এবারের যেতে হবে ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল ইকো মসজিদে।চলে গেলাম অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই নারী পুরুষের নামাজের জন্য আলাদ গেইট। আছরের নামাজ আদায় করা হলো। সবাই মিলে এই ইকো মসজিদ দেখলাম আমি যদিও আগে আরো একবার এসেছি কিন্তু স্বপরিবারে দেখা হয়নাই। এবার দেখে নিলাম। আসলেই চমৎকার স্বাস্হ্য সম্মত পরিবেশ বান্ধব এই ইকো মসজিদ।
এই লেকের ধারে অপূর্ব সেই লেক একদিকে রাস্তা অপর দিকে বিশাল বিশাল সবুজ ঘেরা পার্ক ছোট ছোট ব্রিজ দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাওয়ার ব্যাবস্থা আছে এবম ব্রিজের পিলারের পাশে পানি আটকানো আছে উঁচু থেকে নিচে পরার সেই স্রোতের শব্দ পর্যটকদের একবার হলে থমকে দাঁড়াতে হয়।
লেক পার হয়ে সবুজ ঘাঁসের উপর চাদর বিছিয়ে সবাই মিলে বিকেলের নাস্তা বা বিদায়ী নাস্তা বলতে পারেন। নাস্তা খেতে খেতে আশেপাশের অন্যরাও কেউ গল বেঁধে বসে আছেন আবার অনেক খেলাধূলা করছেন। কেউবা শরীর এক্সারসাইজ করছেন। এক পাশে ট্রেনিং চলছে নাচের একটু দূরেই চলছে ক্রিকেট খেলা যে যেভাবে পারছেন আনন্দ করছেন।
প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এই ইউনিভার্সিটিতে আসেন লেখাপড়ার জন্য। উচ্চ শিক্ষার অন্যতম রাখছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি। আর পর্যটকরা আসেন সবুজ ঘেরা সুপরিকল্পিত ভাবে সাজানো এই শহর দেখার জন্য। শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের প্রাণের শহর।