কবিতার সেই লাইনটি মনে পড়ে গেল।
ঢাকা আমার ঢাকারে
কতটুকু আছিস ঢেঁকে,
কতটা তোর ফাঁকারে?
ঢাকা আমার প্রাণের ঢাকারে।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। আমাদের সবার প্রাণের শহর। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের রাজধানী ব্যাস্ত থাকে। ঠিক একই ভাবে ঢাকা ও একটি ব্যাস্ত এবং জনবহুল শহর।
জীবন জীবিকা থেকে শুরু করে, শিক্ষা, চিকিৎসা, অফিস আদালত মূল কার্যক্রম গুলি রাজধানী কেন্দ্রীক।এছাড়া ব্যাবসা বানিজ্যের জন্য অন্যতম আকর্শন এই ঢাকা শহর।এ কারনে ঢাকা শহরে প্রতিদিনই কোন না কোন কারনে, প্রয়োজনে এবং কোন না কোন কারনে প্রতিদিনই লোক বাড়ছে।
যদিও ঢাকা শহরে উন্নত যাতায়াত এবং নতুন নতুন পরিকল্পনা করলেও শহরের লোক সংখ্যা বসবাসের তুলনায় অনেক বেশী। তাই মানুষ আর যানবাহন নির্মাণ হচ্ছে ইট পাথরের দালান।
বায়ু দূষণ, নয়েজ বা শব্দ দূষন এমন কি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা নাই বললাম। শুধু মাত্র রাস্তা ট্রাফিক জ্যামের কথাটিই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
একটি জরুরী কাজে মাত্র দুই সপ্তাহের এক সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশ এসে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
যদিও ক্রিকেট খেলার মত একেবারে শেষ সময় শেষ রানে আল্লার রহমতে এবং আপনাদের দোওয়ায় কাজটি সমাধান করতে পেরেছি। একটি কাজ সমাধান করা আর জীবনের সাথে যুদ্ধ করার সমান।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বড় ভাই, বড় দুই বোন, ছোট বোনের দুই ছেলে ও তাদের পরিবারের সাথে দেখা করা কেননা গত দুই বছর পূর্বে আমার ছোট বোন অকালে মৃত্যুবরণ করছে।এছাড়া অসুস্থ্য আমাদের অগ্রজ আমার ছোট কাকা যিনি আমাদের মৃধা গোস্টি বা পরিবারের পূর্ববর্তি প্রজন্মের একমাত্র মুরুব্বী আবুল হাসেম মৃধা দেখা করা এবং অপর মুরুব্বী আমার মামী সাথে দেখা করা।
গ্রামের বাড়িতে যাওয়া। ঢাকার মানিকদি কবরস্থানে বাবা মার কবর এবং বনানী কবরস্থানে আমার শশুড়ের কবর জেয়ারত করে দোওয়া করা।এর মাঝে কেনাকাঁটা তো আছেই। আছে বড় মেয়ের শশুড় বাড়ির নতুন আত্বীয়ের বাসায় ইফতারির দাওয়াৎ।এছাড়া প্রতিদিন ইফতারির দাওয়াৎতো আছেই।
বাংলাদেশী স্টাইল চললে কোন কিছুই করা সম্ভব হতো না। আমাকে চলতে হয়েছে একেবার পরিকল্পনা অনুযায়ী। রুটিন মাফিক, প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত এবং প্রতিটি মূহুর্তে আমি শতভাগ কাজে লাগিয়েছি।
আর সব সময় আল্লাহর কাছে দোওয়া করেছি। আল্লাহ যেনো সুস্থ্য রাখেন।আল্লাহ সেই দোওয়া কবুল করেছেন। এজন্য আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া। আমার শালা অর্থ্যাৎ বউয়ের ভাই সর্বশেষ যখন রাতে বনানী কবরস্থানে আব্বার কবর জিয়ারত শেষে বাসায় ফিরছি তখন বলছে দুলাভাই আপনি একটা ম্যাশিন। আসলে তাই এক অল্প সময় নিয়ে দেশে আসা এবং কাজ শেষ করা ম্যাশিন এবং রুটিন ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়।
যে কথা বলছিলাম। ট্রফির জ্যাম।ট্রাফিক জ্যাম কতটা ভয়াবহ এবং কতটা অসহ্য যন্ত্রনা কিম্বা কতটা ভোগান্তি সেটা কমবেশী সবার জানা হলেও আমার মনে হয়েছে এই জ্যামের ভয়াবহতা অনেক ব্যাপক।
এক বিদেশী গবেষকের ঢাকা শহরের গবেষনার একটি কারন আজো উৎঘাটন করতে পারেন নাই। হয়তো পারবেন কিনা তাও জানা নেই। সেটি হলো ঢাকা শহরে মূল কেন্দ্র মতিঝিল এবং গুলিস্থান তিনি সকালে থেকে বিকেল, বিকেল থেকে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি দেখে শুধু মানুষ আর মানুষ।
এত মানুষ কোথা থেকে আসে? কোথায় যায়? কি করে? মানুষ শুধু হাঁটছে আর হাঁটছে।সকাল ,বিকাল, রাত কিম্বা দিন কখনো যেনো কমতি নেই।মানুষের গন্তব্য কোথায়, সেই উত্তরটা তিনি জানাতে পারেন নাই।
এর কোন উত্তর কি আপনার জানা আছে?
সারা দিনে ঢাকা শহরে একটি কাজ করতে পারলেই ঢাকা শহরের মানুষ মহা আনন্দিত। এ যেন বিশ্ব জয় করার মত কিছু একটা করে ফেলেছে।
তাছাড়া রমজান মাস। রোজার মাসে ব্যাংক সহ অফিস আদালত সকাল ১০.০০ টা থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত খোলা এর মাঝেই কাজ করতে হবে। আপনারা জানেন ছয় মাসের চেয়ে বেশী সময় ব্যাংকে লেনদেন না করলে একাউন্ট ডডমেন্ট বয়ে থাকে একাউন্ট এক্টিভ করতে সময় লেগে যায় ২/৩ দিন। এরপর এফডিআর এর পুরাতন কপি খুঁজে না পেলে থানায় গিয়ে পুলের কাছে জিডি করা। ঝক্কি ঝামেলার শেষ কোথায়?
নিকুন্জ, খিলখেত থেকে মতিঝিল বা গুলিস্থানে গেলে আপনার সারাটি দিনে শেষ। নিজস্ব গাড়ি,উবার, বাস ,সিএনজি কিম্বা রিক্সায় যেভাবেই যান।ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা সকালে বের হয়ে কাজ শেষ করে সন্ধ্যা যদি ইফতারি সময় মত করতে পারেন সেটা হবে এক ভাগ্যবানের লক্ষন।
আমার কাছে মনে হয়েছে ঢাকাবাসীদের জীবনের অর্ধেকেরও বেশী সময় চলে যায়। রাস্তায় জ্যামে বসে বসে।
যদিও নতুন নগর পরিকল্পনা ও বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সরকার কিন্তু সেই কাজের সফলতা আসতে হয়তো আরো সময় লাগবে কিন্তু বর্তনামে ঢাকা জ্যামের অবস্থা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
কাজ করতে সময় যতটুকু না লাগে তার চেয়ে অনেক বেশী সময় চলে যায় যাতায়াত। ঢাকার যাতায়াতের ব্যাবস্থা যত উন্নত হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম ততই দীর্ঘ হচ্ছে।
তবে এবার ঈদে মানুষ আনন্দের সাথে ঈদ কেনাকাঁটা করছেন। দিনের চেয়ে রাতেই মানুষ বেশী কেনাকাঁটা করেন। আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ছোট বড় শপিংমল সহ যেকোন মার্কেট এমনকি ফুটপাতের দোকান গুলিও প্রচুর বিক্রী হচ্ছে।
এ জন্যই ঢাকা শহর যে যেখানে যে অবস্থায় যে কোন জিনিস নিয়ে বসলেই বিক্রী হয়ে যায়। আয় রোজগারের অন্যতম স্থান ঢাকা শহর তাই যত কস্টই হোক মানুষের কমতি নেই। যদিও রাস্তায় চলে যায় অর্ধেকটা সময়।