বিশ্বনাথ থেকে রফিকুল ইসলাম জুবায়ের : বিশ্বনাথের সব দলমত,ধর্ম-বর্ণ সহ সব শ্রেণীর মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ পংকি খান আর নেই । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজেউন । গতকাল ১১জুন শনিবার সন্ধ্যা ৬ ঘঠিকার সময় তিনি সিলেটের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন । মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বৎসর। আজ রবিবার দুপুর ২টায় বিশ্বনাথ পৌরসদরস্থ বিশ্বনাথ আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে মরহুমের প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে । বিশ্বনাথের এই বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবীর মৃত্যুর সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সবার মধ্যেই শোক নেমে আসে । সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধূরী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী,জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তার মৃত দেহ দেখার জন্য ও পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে মরহুম আলহাজ্ব মোঃ পংকি খানের বাড়িতে ভিড় জমান।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আলহাজ্ব মোঃ পংকি খান রাজনীতি,সমাজসেবা,আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও আর্তমানবতার সেবায় অসামান্য অবদান রাখার কারণে গড়ে তুলেছিলেন এক ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন পরিচিতি।
এর কারণে বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষের কাছে অন্যতম এক গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি । আলহাজ্ব মো.পংকি খান বিশ্বনাথের স্থানীয় জাহারগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫২ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মো. হাসন খান ও মাতার নাম মোছা: সোনাবান খাতুন।
আলহাজ্ব মো.পংকি খান স্থানীয় বিশ্বনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ভর্তি হন বিশ্বনাথের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ে । সেখানে কয়েকবছর লেখাপড়া করতে না করতেই ডাক আসে প্রবাসের । একসময় স্থায়ীভাবে পাড়ি জমান ব্রিটেনে । সেখানে কিছুদিন মাধ্যমিক স্কুলে ও কলেজে লেখাপড়া করেন। এসময় নিজ দেশে যুদ্ধ বেঁধে গেলে তিনি ও আর দশজন তরুণের মত সূদূর বিলাতে বসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীন হলে নিজ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে তিনি এগিয়ে আসেন । ব্রিটেনে কয়েকজন মিলে প্রতিষ্টা করেন বিশ্বনাথ প্রবাসী সংঘ ।তিনি ছিলেন এই সংগঠনের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান। এ সংগঠনটি বিশ্বনাথের ১ম বালিকা বিদ্যালয় হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে ।বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের ট্রাস্টি মো.পংকি খান ইতোপূর্বে বিশ্বনাথ প্রবাসী সংঘের এবং বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ওল্ডহাম এর ট্রেজারার ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ব্রিটেনে জনমত গঠন ও ফান্ড রাউজিং কমিটির মেম্বার ছিলেন।
মো. পংকি খান প্রায় ১৬ বছর বিশ্বনাথ ্উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ছিলেন এবং সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় একসময় বিশিষ্ট এই সমাজসেবক ২০১০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে বিপুল ভোটে তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই পদেই বহাল ছিলেন । এছাড়া ও প্রায় ১২ বছর বিশ্বনাথ উপজেলা সদরস্থ হাজি মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এবং ১৫ বছর বিশ্বনাথ আলিয়া মাদ্রাসার সদস্য ছিলেন। তিনি বিশ্বনাথ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য এবং বিশ্বনাথ কলেজের প্রতিষ্টাকাল থেকে গভর্ণিং বডির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ও তিনি বিশ্বনাথ বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমিটির প্রতিষ্টাতা সেক্রেটারি । দীর্ঘদিন থেকে আল এমদাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিজ এলাকায় উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে মো.পংকি খান সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন। তিনি বিশ্বনাথ কলেজ প্রতিষ্টার অন্যতম উদ্যোক্তা ও কলেজের জন্য লন্ডনে ফান্ড সংগ্রহের মূল দায়িত্বে ছিলেন। বিশ্বনাথ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মান সরকারী অনুদান প্রাপ্তিতে তার অবদান রয়েছে। হাজি মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভবন নির্মানের জন্য তিনি বিশ্বনাথ প্রবাসী সংঘের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করেন। বিশ্বনাথের কালিগঞ্জ জনকল্যান উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলের রাস্তা নির্মানে তিনি এক লাখ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ,আমতৈল আলিয়া মাদ্রাসা ও স্কুল ,চান্দভরাং হাইস্কুল ,বিশ্বনাথ ,আলিয়া মাদ্রাসা ,বিশ্বনাথ দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা ,বিশ্বনাথ ,জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা,ছহিফাগঞ্জ এসডি মাদ্রসা ,সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসা ,মির্জারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ,ছত্তিশ সৎপুর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় কোনারাই মাধ্যমিক বিদ্যালয় ,ভোগশাইল শাহপরান উচ্চ বিদ্যালয়, হযরত ওমর ফারুক একাডেমি এবং সরুয়ালা দক্ষিন বিশ্বনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ সহ উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্টানে তিনি আর্থিক সাহায্য করেন। ২০০৯ সালে প্রথম বারের মত ও ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন । আলহাজ্ব পংকি খান বিশ্বনাথ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্বনাথে প্রথমবারের মত একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ব্যক্তিগত ভাবে স্টেডিয়ামের জায়গা ক্রয়ের জন্য ৭ লক্ষ টাকা প্রদান করেন এবং তার নিরলস প্রচেষ্টায় বিশ্বনাথের ধীতপুরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নামে বিশ্বনাথে একটি খেলার নিজস্ব মাঠ তৈরি হয় । ইতোমধ্যে স্টেডিয়ামে কিছু অংশে গ্যালারী ,ড্রেসিং রুম ও অতিথিদের জন্য স্থায়ী শেড নির্মাণের ফলে বিশ্বনাথে ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিশ্বনাথের সর্বপ্রথম আধুনিক মার্কেট আল-হেরা শপিং সিটির চেয়ারম্যান মো. পংকি খান প্রায় ৩ যুগ ধরে রাজনীতি,সমাজসেবা ও আর্তমানবতার সেবায় অবদান রেখে নিজ এলাকায় প্রায় ৩ যুগ ধরে রয়েছে নিজস্ব এক ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ইমেজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিবাহিত । প্রায় চার দশক পূর্বে রাহানা বেগমের সাথে তিনি বিবাহ বন্দনে আবদ্দ হন । মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ পুত্র ,২ কন্যা,ভাই,বোন সহ অসংখ্য নাতি নাতনী,আত্মীয়স্বজন,শুভাকাঙ্খী এবং শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন । জীবদ্দশায় সমাজ ও মানুষের জন্য অসামান্য অবদান রাখায় দয়াময় প্রভু যেন তার এই বান্দার সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোক সহিবার তওফিক দান করেন ।
======= লেখক:- সম্পাদক-মাসিক বিশ্বনাথ ডাইজেস্ট ও সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব।