কাতারের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি। আর তাঁর হাত ধরেই বেজে উঠলো ফিফা বিশ্বকাপের দামামা। ২০২২ সালের বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলের আসরের উদ্বোধন করলেন গনিম-আল-মুফতাহ্। আল বাইয়াত ষ্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করলো গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমী মানুষ।।
তিনি কাতারে’র সর্বকনিষ্ঠ এক উদ্যোক্তা। দুই পাবিহীন জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী কিশোর গানিম আল মুফতাহ। কাতারের অধিবাসী সে। তিনি কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যোক্তা, তিনি ঘারিসা আইসক্রিম প্রতিষ্ঠা করেছেন, এটি একটি কোম্পানি যার ৬টি শাখা রয়েছে এবং ৬০জন কর্মী রয়েছেন। গানিম সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলতে চায়। গানিম ভবিষ্যৎ এ প্যারালিম্পিয়ান হওয়ার আশা আছে। গানিম প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও, তার প্রিয় খেলা হচ্ছে সাঁতার, স্কুবা ডাইভিং, ফুটবল, হাইকিং এবং স্কেটবোর্ডিংকে । স্কুলে, গানিম তার হাতে জুতা পরে ফুটবল খেলত এবং তার ‘সাধারণ আকারের’ বন্ধুদের সাথে বলের পিছনে তাড়া করত। আশ্চর্যজনকভাবে, গানিম সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জেবেল শামস আরোহণ করেছেন। নির্ভীক, তিনি প্রকাশ্যে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহনের তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ইনস্টাগ্রামে ১ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার আছে গানিম এর। গানিম আল-মুফতাহ কাতারের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করার লক্ষ্য রেখেছেন।
“গনিম-আল-মুফতাহ্”
কাতারের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি। আর তাঁর হাত ধরেই বেজে উঠলো ফিফা বিশ্বকাপের দামামা। ২০২২ সালের বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলের আসরের উদ্বোধন করলেন গনিম-আল-মুফতাহ্। আল বাইয়াত ষ্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করলো গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমী মানুষ।।
“গনিম-আল-মুফতাহ্” এর শরীরের নিচের অংশ নেই,, জন্মের আগেই দুটো পা হারিয়ে ফেলেন।। “কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম” রোগে আক্রান্ত গনিমের শরীরের নিম্নাংশ না থাকা সত্বেও তিনি গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার একজন রোল মডেল।। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ভক্ত, সমর্থকবৃন্দ।।
তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত মোটিভেশনাল স্পীকার।। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত, বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন।।
গনিম যখন মাতৃগর্ভে রয়েছেন, তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা পড়ে তাঁর শরীরের অবিকশিত অংশ।। ডাক্তার গর্ভপাতের নিদান দেন।। কারণ, অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেয়ে তাকে জঠরে হত্যা করে দেওয়া শ্রেয়।।
গনিমের মাতা-পিতা এই সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারলেন না।। কারণ, ইসলামের নিদান অনুযায়ী গর্ভপাত হলো চূড়ান্ত অপরাধ।
মাতা “ইমান-উল-আবদেলি” এবং পিতা “মুহাম্মদ-আল-মুফতাহ্” এটাকে মহান আল্লাহর সিন্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিলেন।। মাতা পিতার উদ্দেশ্যে বলেন – “আমি হবো সন্তানের বাম পা,, আর,, তুমি হবে তার ডান পা।। আমরা দুজনে সন্তানকে কখনো নিম্নাংশের অভাব টেপ পেতে দেবো না।
৫ই মে ২০০২ সালে পৃথিবীর আলো দেখেন গনিম। শিশুকাল থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়েন তিনি। স্কুল, খেলার মাঠ সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে অপমানিত করা হতো।। তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতেন নিজ পথে, একেবারে নিজস্ব ছন্দে।। বন্ধুদের বোঝাতেন – তাঁর অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য তিনি মোটেও দোষী নন। আল্লাহ তাঁকে যে পরিমাণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রদান করে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।।
নিজের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব-কে এসব বোঝাতে বোঝাতে নিজের অজান্তেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন মোটিভেশনাল স্পীকার।
একদিন যাঁর ভুমিষ্ট হওয়া নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ ছিলো, তাঁর হাতে উদ্বোধন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এক প্রতিযোগিতার আসর।।
কাতারের ২০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী যুবক আজ সে দেশের শান্তির দূত হিসেবে গোটা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছেন। এছাড়া তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পীকার, কবি, সাহিত্যিক, দারুণ বক্তা হিসাবে আরব দুনিয়া তথা গোটা বিশ্বের কাছে সমাদৃত।।
আজ তিনি কাতার সরকারের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজের পরিচিতি তুলে ধরলেন।।