সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সামনে হাওর পেছনে নদী এই দুইয়ের সাথে সংগ্রাম করে দীর্ঘদিন ধরেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের ৩৩টি পরিবার। অভাব অনটন আর টানাপোড়নের সংসারে যখন এই গ্রামের মানুষজন লড়াই করে আসছেন প্রতিবছরেই আবার মরার উপর খারার ঘাঁ অকাল বন্যা এসে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া ও বসতভিটা ও গোবাধি পশু বন্যার পানিতে ভেসেঁ যাওয়া এটা যেন তাদের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সুনামগঞ্জের ইতিহাসে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫১ বছরের মধ্য ২০২২ সালের বন্যায় এই গ্রামটি দ্বীপের মতো জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বিচ্ছিন্ন একটি গ্রাম হয়ে পড়েছিল। এই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের লোকজন একেবারেই নি¤œআয়ের মানুষ, যাদের নুন আনতে পানতা পুড়ায়। বসতভিটায় পানি উঠে ঘরবাড়ি হাসঁ,মোরগী,গোবাদি পশু খাদ্যদ্রæব্য সহ সহায় সম্বল পানিতে ভেঁেস যায়। এই সমস্ত বন্যা কবলিত জয়পুর গ্রামের ৩৩টি অসহায় পরিবারকে বন্যার কবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এস এস সি ৯১ ব্যাচ ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ নামে ঢাকার একটি সংগঠনের বন্ধু বান্ধবরা একটি ১০ টাকায় ঘর ক্যাম্পেইন ফেইসবুক গ্রæপের উদ্যোগে এবং ১০ টাকায় হোক ৩৩টি পরিবারের বন্যামুক্ত নিরাপদ বাসস্থানে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের বসতভিটার উচ্চতা ৫/৬ ফিটের জায়গায় ৯ ফিট করে মাটি কাটার এবং ভিটার চর্তুর দিকে বড় পাথর দিয়ে বেস্টিত কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে সংগঠনের উদ্যোগে পশ্চিম জয়পুর গ্রামে এস এস সি ৯১ ব্যাচ ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ নামে ঢাকা সংগঠনের সভাপতি তোজাম্মেল হক খোকনের সভাপতিত্বে ও স্থানীয় কৃষক আহমেদ কবিরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে মাটি কাটা কাজের উদ্বোধন করেন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হায়দার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন,প্রজেক্টের এ্যাম্বাসেটর আরিফা খানম পলি,প্রধান সমন্বয়ক মজ্ঞুরুল হুদা,চীফ এডভাইজার স্বপন কুমার চন্দ,অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম জুয়েল,প্রচার সম্পাদক মো.আতাউল করিম। এছাড়াও জয়পুর গ্রামের উপস্থিত ছিলেন,প্রবীন মুরুব্বী সামছুন নুর,ফকির হোসেন,মো. আলমগীর,এমাম হোসেন,নুর উদ্দিন প্রমুখ।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন,গেলবছরের বন্যায় এই জয়পুর গ্রামে প্রতিটি বসতভিটার উচ্চতা ছিল কোথাও ৫ ফিট আবার কোথাও ৬ ফিট। তাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একজন ইজ্ঞিনিয়ার ঘটনাস্থলে এনে ম্যাজারমেন্ট করে দেখা যায় ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সময় বসতভিটা প্রায় ৭ফিট পানি হয়ে বসতভিটা ডুবে যায়। তাই আমরা এই বসতভিটাগুলোতে ৯ফিট করে মাটি দিয়ে উচুঁ করলে পরবর্তী বন্যায় এই ভিটাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংঙ্কাটা কম থাকবে। এই পশ্চিম জয়পুর গ্রামটি প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা হওয়ায় মেজারমেন্টে দেড়লাখ স্কয়ারফিট মাটি ফেলে এই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের বসতভিটাগুলো উচুঁ করা,পাশাপাশি ভিটগুলোর চতুরদিকে বড় বড় পাথর দিয়ে বেস্টন করা হবে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে এই গ্রামে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মসজিদ,একটি মক্তব ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক করা হবে এবং প্রতিসপ্তাহে একজন এম বি বি এস ডাক্তার এসে গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন। তাতে মক্তব,মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ৩০/৪০ লাখ টাকা। তারা আরো বলেন একের পর এক হাওর এলাকার নদী ও হাওর বেস্টিত গ্রামগুলোতে পর্যায়ক্রমে এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেন। তারা বলেন এই ১০টাকার উদ্যোগের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সমাজের প্রতিজন স্ব”্ধসঢ়;ছল ও বৃত্তশালী ব্যাক্তিরা যদি ১০টাকা,৫০টাকা ও ১০০ টাকা করে একলাখ মানুষের নিকট হচ্ছে আর্থিক সহযোগিতা উঠানো যায় তাহলে বন্যা আক্রান্ত প্রতিটি গ্রামকে বন্যামুক্ত রাখা সম্ভব বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা জানান, এস এস সি ৯১ব্যাচ
ফ্রেন্ড অব ঢাকা বাংলাদেশ নামের সংগঠনের উদ্যোগে আমার উপজেলার জয়পুর পশ্চিম হাটি গ্রামের অসহায় মানুষজনের বসতভিটা উচুঁ কওে যে বন্যামুক্ত করার যে পরিকল্পনা সংগঠনটি নিয়েছেন এটা ভাল একটি সেবামূলক উদ্যোগে। তিনি এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে
বলেছেন নেতৃবৃন্দরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে সেবামূলক কাজটি করলে সবার জন্যই ভাল হতো। এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণ সিন্ধু চৌধুরী এমন সেবামূলক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াস ও প্রদান করেন তিনি ।