সবাই সুষ্ঠু বিচার পাবেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে। মার্কিন সাময়িকী টাইমকে এ কথা বলেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার টাইমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘(নির্বাচনে) অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য যে কারও মতো তারা স্বাধীন। আমরা তাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মোকাবিলা করব।’
টাইমের প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন; ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন; সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্দেশ্যে কমিশন গঠন; মানবাধিকার; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার হবে নাকি সংসদীয় ব্যবস্থা থাকবে, সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট থাকবে নাকি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, সেগুলো এখনো নির্ধারিত হয়নি। সংবিধান সংস্কারের বৈধতার জন্য গণভোটের প্রয়োজন রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। তবে এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান কোনো রাজনীতিককে যুক্ত করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিএনপির তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই তারা ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এটা ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের’ ইঙ্গিত দেয়।
যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ও রূপরেখা চান বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। তবে এ নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চান না প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ভাষ্যমতে, নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করেনি সরকার। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমাদের রেললাইন ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক দিকে যেতে পারে।’
টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বাদে সত্যিকার জাতীয় ঐকমত্য সম্ভব না–ও হতে পারে। অন্তত একটা সময় দলটির বিপুল জনসমর্থন ছিল। বর্তমানে দেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের সদস্যরা বলছেন, তাঁরা কোনো বাছবিচার ছাড়াই নির্বিচার আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন জাহিদ মালেক। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি টাইমকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করছেন না। কারণ, তিনি হৃদ্রোগে ভুগছেন এবং মনে করছেন যে তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না। জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। আমার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। আমি অসুস্থ। চার মাস ধরে আমি পরিবারের সদস্যদের দেখি না।’
টাইমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ বড় করে তুলে ধরতেন, তাঁরা এখন দলটির সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে আনছেন। ভয় পাচ্ছেন যে এই সম্পর্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁদের ওপর চড়াও হতে পারেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে শেখ হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং অন্তত ২৫ জনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সহিংসতার মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।