স্টাফ রিপোর্ট : আগামী বছরের শুরু থেকে ইউরোপীয়ান নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত বা ফ্রি মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এই আইনে ইউরুপের নাগরিকদের ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের আর কোনো সুযোগ থাকছে না। গতকাল ১১ নভেম্বর ২০২০ সংসদে পাশ হওয়া ইমিগ্রেশন বিলের সংস্কারের মাধ্যমে নিজস্ব ইমিগ্রেশন আইনের ক্ষমতা পেল ব্রিটেন । এর ফলে এই প্রজন্মের জন্য প্রথমবারের মতো সীমান্তের উপর দেশটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে কার্যকর হবে।
হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, এটি একটি “ঐতিহাহিক এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত”এবং ইমিগ্র্যাশন সিস্টেমের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে । নতুন এই আইন যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের চাকরির সুরক্ষায় সহায়তা করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে, “সঠিক এবং ন্যায্য” এই নীতিতে ব্রিটেন সিদ্ধান্ত নেবে যে এই দেশে কে বা করা আসবে। তিনি আরো বলেন: “এই যুগান্তকারী আইনটি পাস হওয়ায় যুক্তরাজ্যের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত, যা আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে। “ আমরা বার বার ব্রিটিশ জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, অবাধ যাতায়াত বন্ধ করে একটি সুষ্ঠু পয়েন্ট ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করবো। “সুতরাং এই প্রতিশ্রুতি রাখতে আমরা সচেষ্ট হয়েছি”। ২০১৬ সালের গণভোটের মূল প্রতিপাদ্য ছিল অনিয়ন্ত্রিত মাইগ্রেশন বা অবাধ অভিবাসন নীতি রুধ। প্রীতি প্যাটেল বলেন আবেদনকারীরা কোথায় থেকে এসেছেন তার পরিবর্তে তাদের দক্ষতার উপর মূল্যায়ন করা হবে।
রয়্যাল অ্যাসেন্ট প্রাপ্ত ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট, নিয়মগুলি নির্ধারণ করে যা কার্যকর হবে ব্রেক্সিট পরবর্তী সময় থেকে। অভিবাসীদের ব্রিটেনে কাজ করার অনুমতি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে এবং তাদের উপার্জন, ভাষা দক্ষতা এবং কর্মসংস্থানের স্থিতি ইত্যাদি দেখে অনুমুতি নির্ধারণ করা হবে। অভিবাসীদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা বা কর্মীদের ঘাটতি রয়েছে এমন পেশাগুলির জন্যও পয়েন্টগুলি বিবেচনা করা হবে।
লেবার লিডার স্যার কেয়ার স্টারমার এবং লেবার সংসদ সদস্যরা এই বিলটির বিরোধিতা করলেও এটি কমন্সে সহজেই পাশ হয়।
বরিস জনসন গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে লেবার নেতার সমালোচনা করে বলেন, লেবার এই সংস্কারের বিরুধিতা করে পুনর্বহাল করার কথা বলছে। তিনি বলেন,নতুন পয়েন্ট-ভিত্তিক সিস্টেমটি ইইউ ছাড়ার “অন্যতম সুবিধা”বলে সরকার মনে করে।
স্বল্প দক্ষ বা লো-স্কিল মাইগ্রেশন রুধে নিয়োগকর্তারা হুঁশিয়ারি করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, বিদেশী শ্রমিকদেরকে জন্য নূন্যতম মজুরির দ্বারা বা তার কাছাকাছি বেতনে নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ব্রিটেনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিশ্ব থেকে সবচেয়ে দক্ষ এবং যোগ্য অভিবাসীদেরকে আকর্ষণ করতে চায়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদরা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য যুক্তরাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক সুবিধা প্রদান করবে।
স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীদের এখানে আসা সহজতর করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পও চালু করছে। মিস প্যাটেল বলেন, নতুন আইন করোনভাইরাস সঙ্কটের সময়ে চাকরি হারিয়েছে এমন লোকদের আবারও কাজে আনতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, মহামারী থেকে দেশটি মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সরকার তার নিজস্ব অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে।
নিয়োগকর্তাদেরকে যুক্তরাজ্যের কর্মীদের, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সঙ্কটে আক্রান্তদের প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করার জন্যউৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেছিলেন: “আমাদের নতুন ইমিগ্রেশন সিস্টেমটি আমাদের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে, ব্যবসার উন্নয়নে সহায়তা এবং কর্মীদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কৌশলগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হবে।” আইনটি সংসদের মধ্য দিয়ে পাসের সময় তুমুল প্রতিরোধের মুখে এটি কমন্স এবং লর্ডসের পাশ হয়।