ছাতক প্রতিনিধি, সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডের জন্য আকুতি করেছেন দেশের জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে ৫নং সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মনোহর আলী শাহপরান (৯০) কোথাও সিট খালি নেই। একটা আইসিইউ বেড যেন সোনার হরিণ। আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে রোগী করুণ মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউপির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও আলমপুর গ্রামের মৃত শাহ সানুর আলীর পুত্র গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মনোহর আলী ওরফে শাহপরান (৯০)। তার আইসিইউতে একটি বেডের জন্য ৫দিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারবর্গ অপেক্ষা করছেন। তার পরিবার অনেক খুজাকুজি করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোথায় ও আইসিইউ পাচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও স্বজনরা আর্তিতে বিব্রত হচ্ছেন চিকিৎ্সকরা। কেবল চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদের। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে তাকে মরতে দেখার চিত্র এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।
জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি রাতে তার বাড়ি থেকে পাশে বাড়িতে যাবার পথে চলাচল করতে গিয়ে উবা থেকে হঠাৎ মাটিতে পড়ে অঞ্জান হয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে অঞ্জান অবস্থায় সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই রাতে রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল হাসপাতাল থেকে সিলেটের ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।বীব মুক্তিযোদ্ধা শাহ মনোহর আলী ওরফে শাহপরান দীর্ঘদিন ধরে হাইপেসারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিনি হাসপাতালে বিছানা, খাবার কিংবা কিছু ওষুধ ফ্রি পেলে ও আইসিইউ একটি বেড জন্য কর্তৃপক্ষ কাছে আকুতি মিনতি করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে গিয়ে সম্মান বা বিনা মূল্যে চিকিৎসার সুযোগের পরিবর্তে নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন
তার পবিরারবর্গ জানিয়েছেন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো সিট খালি নেই। আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুশায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোহর আলী শাহপরান বাচাঁনো যাবে না বলে বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসক জানান। তাকে আইসিইউ প্রয়োজন , জরুরীভাবে আইসিইউতেই চিকিৎসা দিতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অভিযোগ করেন ৫দিন ধরেই আইসিইউ বেড জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করে সিট দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৫ দিন ঘুরিয়েও কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনই তাঁর কাগজে ‘দুঃখিত, আইসিইউ বেড খালি নেই। ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিচ তলায় ২৬নং ওয়াডের সিট পেয়ে চিকিৎসার সুযোগ পেলে ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ মনোহর আলী শাহপরান একটি আইসিইউ বেডের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই মুক্তিযোদ্ধার জন্য দেয়নি কোনো সুবিধা। তিনি দেশের জন্য লড়াইয়ে জয়ী হয়ে এখন জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে এসে নিঃস্ব গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মনোহর আলী ওরফে শাহপরান। তিনি তার বিছানায় শুয়ে চোখের জল ফেলে বলেন ‘আমার চিকিৎসা কি বন্ধ হয়ে যাবে! এখন আমার কী করার আছে! একটু থেমে এই মুক্তিযোদ্ধা আবার বলেন, ‘সরকার তো দূরের কথা, কাউকেই তো আমি পাশে দেখছি না। এভাবেই কি আমি হেরে যাব?’
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহপরানের পাশের তার নাতি হাসান আহমদ জানান,‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমরা যতটা সরব বা সচেতন, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা নিয়ে সে রকম উদ্যোগ দেখছি না। কিন্তু যাঁদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই মুক্তিযোদ্ধারা আজ বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন- এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য আর কী হতে পারে