পর্ব – এক
লেখকঃ মোহাম্মদ ছালিকুর রহমান (এডভোকেট)
আমি এলাকায় বা পরিবারে বড় হয়ে উঠিনি। আমার বেড়ে উঠা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতির প্রতিকূলেই বলতেই হবে।বড় হয়েছি যে গ্রামে জন্ম নিয়েছিলাম তার থেকে অনেক অনেক দূরে। সিলেট শহরে সেই শিশু কাল থেকেই বেড়ে উঠেছি। তাই সব সময় একটা শূন্যতা লেগেই আছে।
তাই নিজ এলাকার বিজ্ঞ কাহারও সাক্ষাত হলে জানতে চাই অনেক কথা। নিজের পরিবারের ইতিহাসের কথা, উদঘাটন করতে চাই স্থানীয় গৌরব। প্রসার ও প্রচার করতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তাগিদে, যারা ভালোবাসেন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হয়, এলাকার একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচয় হল লন্ডনে। সেটা সম্ভব হয়েছিল একটি দাওয়াতের মাধ্যমে। আমার গ্রাম এলাকার স্বনাম ধন্য প্রাক্তন হেড মাস্টার ফনিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য সাহেবের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের। সেটা হয়েছিল অক্টোবর ২০১৮ সালে লন্ডনে।উনার প্রাক্তন কর্ম স্তল মনুমুখ পি.টি. হাই স্কুলের লন্ডন প্রবাসী ছাত্র ছাত্রীরা ডারমন্ড স্ট্রিটের ( নর্থ লন্ডন) এক রেস্টুরেন্টে উনাকে নিয়ে বসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্তিত ছিলেন বাজরা কোনা গ্রামের প্রয়াত কয়সর মাস্টার।
উপস্তিত সমাবেশ থেকে ফনি স্যার সম্বন্ধে শুনে বিমোহিত হলাম। দুই একদিন পর উনার সাথে দেখা করার অভিপ্রায় মনে জাগল। উনার ফোন নং সংগ্রহ করে আলাপ হল। জানতে পারলাম উনি লন্ডনে খুব স্বল্প সময়ের জন্য এসেছেন। আলাপ আলোচনায় জানতে পারলাম উনি এক আত্মীয়ের বাসায় আসছেন বিকেলে বেড়াতে সেটা আবার আমারই বাসার কছেই। সেই সুযোগ আমরা দুজনে কাজে লাগালাম। সুবিধা অসুবিধার খবর নিয়ে সিদ্বান্ত হল উনার সাথে সেই বাসাতেই দেখা হবে। সময় সল্পতা হেতু উনি আমার বাসায় আসার নিমন্ত্রন রাখতে পারলেন না।
উনার সাথে আলাপ হচ্ছে নির্ধারিত বিকেলে। যতই আলাপ এগুচ্ছিল ভাবতে লাগলাম এমন মানুষ আজ কাল সমাজে তো পাওয়াই যায় না। এই সব মানব সন্তানই তো রেখে যান তাদের পদ চিহ্ন সমাজ সংসারের বিকাশে। পরিচিত হয়ে বেশ ভালো অনুভূতি উপলব্দি করতে লাগলাম। যার টানে এখানে এসেছি উপলব্ধি করলাম সেটা আছে হেথায়। জ্ঞানের আলো চমকাচ্ছে, পাচ্ছি তার কিরণ মোদ্দাকথা সেই জন্যই তো আসা।আমি বলেই পেললাম আপনি লন্ডনে থাকলে প্রায়ই আপনাকে দেখতে আসতাম। যেহেতু সেই যাত্রা ছিল নেদারলেন্ড থেকে লন্ডন সফর দিয়ে কানাডায় ফিরার । তাই উনার হাতে সময় ছিল খুবই সীমিত। উনাকে আরও বেশি দিন লন্ডনে পাওয়ার ইচ্ছা সেটা হয়ে উঠছে না।
ফনি স্যারের সাথে দেখা হওয়ার পর ইতিমধ্যে বেশ মাস ও বছর গত হয়েছে, বছর দুই তো হবেই । ফনি স্যার আমার মানষ পট থেকে মুচে যাবার কথা কিন্ত তৎপরবর্তীতে প্রায়শই হানা দিতে শুরু করলেন। তাই আবার উনার খবর নিবার তাগাদা অনুভব করলাম। জানতে পারলাম উনি স্থায়ী বসতি স্তাপন করেছেন উনার ছেলের সাথে কানাডার মন্ট্রিল শহরে।আবার শুর হল ফোন নং সংগ্রহের পালা এবং উনার সাথে পুনশ্চ যোগাযোগ শুরু হল।
আমাদের এই আলাপচারিতা শুরু হল ২০২০ সালের অগাস্ট মাস থেকে। যেহেতু উনার সাথে আমার পূর্ব পরিচিতি নেই বা উনার ধ্যান ধারণা সম্বন্ধে মোটেই ওয়াকিবহাল নই তাই একটু দিধাদন্ধের মধ্যেই ছিলাম।উনাকে কি বলে সম্বোধন করব ? উনাকে ফোন দিয়ে আমার পরিচয় দিয়ে ভালো মন্দ খবর নিলাম। উনি আমাকে আপনি বলছেন এবং স্যার বলে ডাকতে শুরু করলাম।দু’চার দিন পর পর ভালো মন্দ খবরাদি নিতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে উনাকে জানার সুযোগটা প্রসারিত হতে শুরু হল।

এক সময় আমারা আলাপ আলোচনা শুরু করলাম আমাদের কমন বিষয় বিখ্যাত মনুমুখ বাজার নিয়ে। আমার জানার সাথে যোগ হল অনেক না জানা মূল্যবান তথ্য সম্পদ । আমি পরবর্তীতে তা বিজ্ঞ সমাজের জন্য লিখে অন লাইন পত্রিকাতে ছাপিয়েছি। উনাকে লিঙ্ক পাঠিয়ে পড়তে অনুরুধ করলাম ও পরের আলোচনায় আমরা একসাথে এর বিবরণের ও ছাপার স্বচ্ছতার বিষয়ে নির্ভুল হই।
এই গুণী জনের সহিত আমার সখ্যতা বাড়ছে। মানুষটাকে বড় আপন ও একান্ত লাগছে। কথা বার্তার স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তায় আমার মনে হতে লাগল আমি এক অনন্য মানুষকে জানতে যাচ্ছি। যতই আলাপের ও বিষয়ের বিস্তার ও ব্যপকতা বাড়ছে ততই আমি পুলকিত ও গর্বিত বোধ করছি।
নিম্নের লেখা অনেক গুলো টেলিফোন কথোপকথনের আলোকে লিপিবদ্ধ। স্যার বলছেন আমি নোট লিখে রাখছি। আমি চেষ্টা করেছি সেই আঙ্গিকে লেখাটাকে সাজাতে। আমি এর সাথে মাজে মধ্যে নিজের উম্মা ও উচ্চাস প্রকাশ করেছি মাত্র, যেখানে একান্ত না করে পারি নাই। লেখাটাকে একটা এলাকার ও সময়ের দলিল হিসাবে তুলে রাখতে শব্দ ও ভাব গত দিক দিয়ে খুবই সচেস্ট ছিলাম। ফনি স্যারের মুখের বলা জীবনালেখ্য যতদুর সম্ভব উনার মতই রাখতে চেয়েছি।
স্যারকে জিজ্ঞেস করে নিলাম, আপনার লেখা পড়ার শুরুটা কোথায় ?
তিনি বলেন প্রাইমারি পড়েছি আমার গ্রামের স্কুলে। বাসুদেবশ্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌলভী বাজার। আমাদের সময়ে ৫/৬ মাইলের ভিতরে একমাত্র প্রাথমিক স্কুল। আমি তারপরে ভর্তি হই মুনুমখ পি.টি. হাই স্কুলে, সেটা ছিল ১৯৫৩ সাল। জিজ্ঞেস করলাম পি.টি. দিয়ে কি বুজাচ্ছে ? স্যার বলছেন, মনু মুখ স্কুলের অনন্যতা হল যে, সাধারণ শিক্ষার সহিত পলিটেকনিকেল শিক্ষ কার্যক্রম চালু। সেই জন্য এই স্কুলের এমন নাম। সুতা তৈরি ও কাপড়ের বোনন হাতে কলমে এই স্কুলে শিক্ষা দেওয়া হত। আমাদের স্কুলে ডাঃ কাশিম আলি এই ক্লাস নিতেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম একজন ডাক্তার হয়ে এমন ক্লাস ? স্যার বললেন, উনি শিক্ষকতার সহিত গ্রাম্য ডাক্তারও ছিলেন। সেই সময়কায় আপনাদের স্কুলে আসা যাওয়া কিভাবে করতেন ? আমার বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় তিন মাইল দুরত্বের পথ। আমারা কিন্ত সেই সময়ে খালি পায়ে স্কুলে যেতাম। কাজির বাজার টারনিং থেকে রাস্তাটা ছিল পাথর বিছানো । একদিন আঘাত পেয়ে আমার আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়েছিলাম আজও আঙ্গুলটা কালছে হয়ে আছে।
আমার এই কস্টটা কিছু লাগব হল যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। আমাকে সাইকেল দেওয়া হল। সেই সময়ের রাস্তা ঘাটের অবস্তা খুবই সূচনীয় থাকত, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। তখন সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতে পারতাম না। পথিমধ্যে সাইকেল রেখে যেতাম। আমার সাথী হিসেবে বেশ কয়েকজন ছিল। আমার গ্রামের আমার ক্লাস সাথী ছিল দুইজন। রথিস রঞ্জন দে ও গৌফিকা দত্ত। এ ছাড়া কাজির বাজার টারনিং এ যোগ হত আব্দুল গনি চৌধুরী ও আফরোজ মিয়া। এই আফরোজ খুব ভাল ফুটবল খেলত। মৌল্ভী বাজার সরকারী স্কুল চালাকি করে ওকে নিয়ে যায়। স্যারকে জিগ্যেস করলাম এই আফরোজ ভাই কি লন্ডনি ছিলেন এবং বাড়ি জগ্নি ( যমুনিয়া) কি না ? তিনি বললেন হাঁ, সেই। আমি উনার সাথে আফরোজ ভাইকে নিয়ে আমার ঢাকার স্মৃতি চারণ করলাম। স্যার আপনাদের সময় স্কুলের সময় কখন ছিল ? বাড়ি থেকে ৯ টায় বের হয়ে যেতাম। ক্লাস শুরু হওয়ার ঘণ্টি পড়ত সকাল ১০.৩০ টায় এবং শেষ হত ৪.১৫ ঘটিকায় ।
এলাকার তখনকার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পরিচয় জানতে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সহপাঠি কে কে ছিলেন ? আপনারা কয়জনই বা মেট্রিক দিয়েছিলেন এবং ফলা ফল কেমন ছিল? স্যারকে আরও জিগ্যেস করলাম আমার চাচাত ভাই রাহাত উদ্দিন সাহেব কে চিনতেন নাকি ? উনি কি আপানদের সাথের ছিলেন? স্যার বলতে লাগলেন হাঁ, উনাকে চিনতাম উনি আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। আমারা ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড ঢাকা, এর অধীনে পরীক্ষা দেই, তখন বোর্ড বলতে একটাই ছিল। আমারা ১৯৫৮ সালে মোট আট জন মেট্রিক পাশ করি যাদের নাম পরিচয় মনে পরে তারা হলেন ঃ (১) আবুল মিয়া ( আব্দুল বারি) (২) শামাসু (৩) মাশুক ( ২/৩ এর গ্রাম পৈলন পুর) (৪) আব্দুল গফফার চৌধুরী ( লন্ডন প্রবাসী, বাড়ি খাদিম পুর) (৫) নলিনি কুমার পাল ( শিক্ষক মনুমুখ স্কুল, গ্রামঃ কাকৈরকোনা ) (৬) শুধাংশ ধর ( বাউর বাগ, পরবর্তীতে হালিয়া কান্দি কলেজের প্রফেসর ) । আমি ও শুধাংশ দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হই।
আমাদের সময় উক্ত বছরে মৌল্ভী বাজার মহুকুমার মধ্যে একমাত্র কুতুব উদ্দিন (বাড়ি কুমিল্লা ,পোস্ট মাস্টারের ছেলে) প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। সে মৌল্ভী বাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে পরীক্ষা দিয়েছিল। ঐ বছর মেট্রিকে সারা দেশে যে প্রথম হয়েছিল ওর নাম সথী দুলাল ধর। সে পরবর্তীতে আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। আমরা একি হলে ছিলাম। সে ফিজিক্সে পড়ত।
আরও প্রশ্নের মাধ্যমে আমার জানার সীমানার পরিব্যাপ্তি গঠাতে শুর করলাম। আপনার সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞ ও প্রতিথযশা কাউকে যদি স্মরন করতেন, স্যার ?
স্যার বলছেনঃ-
আমার তিন বছরের সিনিয়র ছিলেন আমার পার্শ্ব বর্তি গ্রাম তৈলক্ষ বিজয়ের চন্দ বাড়ির বিধু ভূষণ চন্দ। উনি এম.সি. কলেজ থেকে বি. এস. সি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৮ম স্তান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সুনাম অর্জন করেছিলন। কর্ম জীবনে এম. সি. কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আমি বলতে গর্বিত হই যে উনিও মনুমুখ স্কুলের ছাত্র ছিলেন, যে স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষক আমিও ছিলাম। ঐ তৈলক্ষ বিজয় গ্রামের আরেক সন্তান হলেন ডঃ রঙ্গ লাল সেন। উনি মেট্রিক পাশ করে ৮ বছর শিক্ষকতা করেন। উনি প্রাইভেট আই .এ . পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন ও পরে সমাজ বিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ম শ্রেনিতে মেধা তালিকায় ১ম স্তান অধিকার করেন। উনার অনেক গেপ থাকায় আমার এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে মাস্টার্স করেন। ডঃ রঙ্গলাল সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগীয় প্রধান হয়ে অবসরে যান। আমাদের মৌল্ভী বাজার শহরের চৌমুহনার আরেক উজ্জ্বল নাম ছিল বৈজ্ঞানিক অনাধি ভট্টাচার্য, সে ফ্রান্সে বসবাস করত। কয়েক মাস আগে মারা গেছে। সে মেট্রিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্তান অধিকার করেছিল। সে আমার এক বছর জুনিয়র ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমেস্টিতে মাস্টার্স করেছিল।
স্যার আর কেউ কি ছিলেন লেখা পড়ায় বা চাকুরীতে অগ্রগ্রামী আমাদের এলাকায় ? আমার মূল উদ্দেশ্য হল যতটুকু তথ্য উনার কাছ থেকে নেওয়া যায়। এর চেয়ে সঠিক নির্ভুল তথ্যের উৎস পাওয়া যাবে না।
স্যার বলতে লাগলেন, আমি ছাত্র বেলায় শুনেছি কয়েকটি নাম। আমার কাছেরই নালিউরি গ্রামের প্রফেসর এখলাসুর রহমান ও আড়াই হাল গ্রামের ছমির উদ্দিন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব দের কথ। উনারা আমাদের অত্র এলাকার সম্মানীয় সরকারী চাকুরীজীবী। দুই জনই কর্ণ ফুলি পেপার মিলে কর্মরত ছিলেন, তাছাড়া স্তানীয় পর্যায়ে ডাঃ খালিসুর রহমান এর নাম স্মরণ করতে হয়। উনি সরকারী এল.এম.এফ. ডাক্তার ছিলেন। উনি মনু মুখ বাজারের সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ছিলেন। উনার বাড়ি কুশিয়ারা নদীর উত্তর পাড়ে।
স্যার আপনাকে কি জিগ্যেস করতে পারি আপানর বয়স কত হয়েছে ? আমার জন্ম ৬ই মার্চ ১৯৪২ ইংরেজি। স্যার বলতে লাগলেন,তাছাড়া আমাদের অত্র এলাকার গৌরব, তৎকালীন সময়ে মৌল্ভী বাজার মহুকুমার মাঝে অন্যতম ভদ্র লোকের বসবাস নামে খ্যাত বাউর বাগ গ্রামের এক প্রতিভার কথা স্মরন করতে চাই। উনি হলেন সুরেন্দ কুমার ধর ( এফ. আর. সি. এস, লন্ডন)। স্যার এফ. আর. সি. এস. গ্রাম থেকে ? আমি অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম এফ. আর. সি. এস এই গ্রাম থেকে ঐ সময়ে ? স্যার বললেন তাহলে শুনন, উনি মনে হয় ৪০ দশকের মাঝা মাঝি বা শেষে এই বিদ্যা অর্জন করেছিলেন। উনি একটা মেডিসিন তৈল আবিষ্কার করেছিলেন নাম ছিল ” শঙ্কর তেল”। এই তেলটার উৎপাদন ও বাজারজাত ও এর ইতিহাস খবর নিলেই বুঝতে পারবেরন কবেকার কথা বলছি। স্যার এলোপেথিক ডাক্তার হয়ে তেল আবিস্কার? হাঁ উনি এলোপেথিক ডাক্তারই ছিলেন। ঐ তেলটা ছিল একটা বিস্ময় আবিস্কার, মেডিকেল তৈল, হাড় ভাঙা- জুড়া কাজে অসাধ্য সাধনে পারংগম। এই তৈল এখন অব্দি আমার পাশের মিরপুর গ্রামের উনাদের আত্মীয়রা একই নামে মৌল্ভী বাজারে বিপণন করে আসছেন। বাউর বাগ গ্রামে আর দুইটি স্বনামধন্য বাড়ি ছিল ” সোমের বাড়ি” ও ” ধরের বাড়ি”
স্যারের সাথে যোগ করে বললাম আমার জানা মতে এই বাউর বাগ (মৌল্ভী বাজার) গ্রামের একাদিক ব্যক্তি আই. সি. এস. ছিলেন। ঐ গ্রাম ছিল সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত জমিদারদের এবং সব বাড়িরই দ্বিতীয় একটি বাড়ি ছিল কলিকাতা শহরে। এবং আমি তাও শুনেছিলাম বাউর বাগ গ্রামের বেশ কয়েকজন কলিকাতা আইন পরিষদ ও সচিবালয়ে ছিলেন। স্যার আমার সাথে সায় দিলেন।
স্যারকে আরও বললাম বাউর বাগ গ্রামে তৎকালে একজন সম্মানীয় মুসলিম ভদ্রলোকের বসতি ছিল, যার বাড়ির খ্যাতি লোক মুখে সুর হয়ে প্রচার হত। তখন স্যারকে একটা শ্লোক শুনিয়ে দিলামঃ-
“‘আরব উল্লার দাড়ি,
মান উল্লার বাড়ি,
আকাইর ডেকা,
সব্দর মহাম্মদের বাদা,
মুনশি বাড়ির কাঁদা,
মহাজন বাড়ির টাকা,
হানিফ উল্লার গফ আর
সইফ উল্লার ডপ”
(চলবে….)