পর্ব-২
……ছিল এক সুখের সংসার, স্বামী আর এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে দিন কাঁটছিলো ।
কত আনন্দে দিন কেঁটে যায় তাদের। দুটি সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় ইতালীর এতদিনের সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে আসেন লন্ডনে।
লন্ডনে এসেও সুখে দিন কাঁটে। স্বামী বেচারা প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও কিছু দিন পর স্ত্রীর পরামর্শে টেক্সী মিনিক্যাবে নামেন। প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড দিয়ে টয়টা এরিস চকচকে নতুন গাড়ী কিনেন। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান মনের আনন্দে। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই সবাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা।
আপনারা জানেন ইতালী এসে বেশীর ভাগ মানুষ অতি সহজে মিনি ক্যাব বা উবারে নেমে যান। ইতালীয়ন ড্রাইভিং লাইসেন্স এখানে কার্যকর তবে ছয় মাসের মধ্যে” ডিভলা”
থেকে পরিবর্তন করে নিলেই হয়। মিনিক্যাব করতে হলে দুটি পরীক্ষায় পাশ করলেই হয় পাশ করাও সহজ সেই সাথে আপনার জিপি বা ডাক্তারের নিকটি থেকে একটি সার্টিফিকেট এবং নির্দিষ্ট ফি দিয়েই সহজে পেয়ে যাবেন স্বপ্নের মিনিক্যাব ড্রাইভিং লাইসেন্স।
যাদের নিজের গাড়ী কেনার ক্ষমতা আছে বা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আছে তাদের জন্য ভালো আর না হলেও কোন সমস্যা নেই আপনার টেক্সী ক্যাব চালানোর লাইসেন্স থাকলেই ট্যাক্সি ক্যাব কম্পানী গুলি থেকেও আপনাকে গাড়ী দিবো সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে আপনাকে গাড়ীর জন্য এক্সটা মানি পে করতে হবে। এ জন্য বেশীর ভাগ মানুষ নিজেই গাড়ী কিনে ক্যাব উবারে কাজে লেগে যান।
ঘটনাটি ২/৩ বছর আগের তখন মিনি ক্যাব, ট্যাক্সি এবং উবারে জয়জয়কার। প্রায় সবাই উবারে কাজ । পয়সা আর পয়সা যে যতক্ষন কাজ করতে পারবেন ততই পয়সা ইনকাম হবে। স্বামী বেচারার পয়সার লোভ ধরা পরে। সংসারে সময় দেওয়ার মত সময় তার হাতে নেই। রাত দিন ট্যাক্সি করা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসলেও সংসার জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়।
কথায় আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। কিন্তু সেই ক্ষুদ্র লোভ তাকে এত বড় মাসুল দিতে হবে তা কি সে জানতো ?
কথায় আছে বিপদ যখন আসে চার দিকদিয়েই আশা। কিন্তু এই বিপদ সে নিজেই ডেকে এনেছে। ইতালী থেকে আমরা যারা এসেছি। আমাদের আসার পর অনেক বন্ধুবান্ধব কে ব্রিটেনে আসতে কোন না কোন ভাবে সবাই সহযোগিতা করে থাকি।
ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন দূর্বা বনে ও বাঘে ধরে। স্বামীর ব্ন্ধুর স্ত্রী এবং এক মেয়ে লন্ডনে সেটেল্ট হওয়ার জন্য তার বাসায় জায়গা দেওয়া হয়। এটা আমরা প্রায় সবাই করে থাকি। বন্ধু বান্ধব এলে বাসায় থাকতে দেওয়া তাদের জন্য বাসা খুঁজে দেওয়া এটা ইতালী থেকে আসা মানুষ গুলি বড় বৈশিস্ট । ইতালী থাকতেই দুই পরিবারের মধ্য অনেক জানাশুনা । অনেক পরিচিত।
খাল কেঁটে কুমির এনেছে। বেচারা স্বামী দিনরাত উবার নিয়ে ব্যাস্ত। কোন রকম বাসায় এসে খেয়ে সামান্য রেস্ট বা ঘুম দিয়ে আবার ছুটে চলা। বিরামহীন পথ চলা একতলার যেন শেষ নেই। যখন শেষ হলো তখন সব শেষ।
যে কথা বলছিলাম। স্বামী বেচারা অর্থের পিছে দৌডাচ্ছেন। অল্প দিনে বেশী পয়সা আয় করার জন্য।আরো বেশী বেশী আয় করবেন।কত সুখের সংসার অর্থের কোন অভাব নেই এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে স্কুল পেরিয়ে কলেজে পরছে মেয়ে প্রাইমারি স্কুল থেকে সেকেন্ডারি স্কুলে যাচ্ছে। ছেলে জিসিএসি তে অনেক ভালো ফলাফল করেছে। সন্তানের পরীক্ষার ভালো ফলাফলে সবাই খুঁসি । স্বামীর আপন ছোট ভাই ও আগে থেকেই থাকেন লন্ডনে । সবাই খুসি। কিন্তু ঐ যে খাল কেঁটে কুমির এনেছে সে কিছুতেই যেন এই খুঁসি মেনে নিতে পারেন নি। ঐ মহিলা ইবলিশের চেয়ে ও বড় শয়তান।
হাদিসে আছে ইবলিশ তার অন্যান্য শিষ্য বা অন্য ফেরেস্তাদের কাজে পাঠানোর পর যখন সন্ধ্যায় কাজের হিসেব নেন। তখন এক এক ফেরেস্তা ইবলিশের কাছে সারা দিনের কাজের হিসেব দেন। কেউ বলেন, আমি নামাজ থেকে মানুষকে পথ ভ্রুস্ট করেছি, ইবলিশ এটা কিছুই না। আমি এক্সিডেন্ট করিয়েছি, আমি আগুন লাগিয়েছি। কেউ বলবে সন্তান কে বাবা মার অবাধ্য করেছি। আমি একজন কে আল্লাহর সাথে শিরিক করিয়েছি এছাড়া আরো বড় বড় অন্যায় করার কথা বললেও ইবলিশ খুঁসি হবে না। তখন এক ফিরেস্তা বলবে আমি একটি সংসার ভেজাল লাগিয়েছি। সংসার ভেঙে দিয়েছি তখন শয়তানের সর্দার ইবলিশ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে সাবাস । তুমি শ্রেস্ঠ কাজটি করেছো।
সংসার ভাঙা হচ্ছে ইবলিশ বা শয়তানের সব চেয়ে বড় কাজ।এ কাজে যারা সহযোগিতা করে আল্লাহ তাদেরকে নানদ দেন। রোজ কিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
স্বামী বাসায় আসলেই ঝগড়া শুরু করেন প্রানের প্রিয়তম স্ত্রী। প্রানের প্রিয়তম বললাম এই জন্য যে এদের বিয়েটা হয়েছে প্রেম বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে থাকতেই তাদের পরিচয়। ইতালী থেকে দেশে যেয়ে বাবা মায়ের অমতে নিজেই বিয়ে করেন। বাবা মা এ বিয়ে মেনে নেন নি। সে এক লম্বা কাহিনী । হয়তো পরে কোন এক সময় লেখার চেস্টা করবো।যার জন্য বাবা মা কে ছেড়েছেন আজ সেই প্রানের চেয়েও প্রিয় মানুষটি তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বুকটা ভেংগে চূড়মার হয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী এবং অতি আদরের দুটি সন্তান। আজ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সেই কস্ট সে কাকে বলবে ?
দিন যত যায় স্ত্রীর স্বন্দেহের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে থাকে। বাসায় সব কিছু থাকার পরও স্বামীর জন্য কোন খাবার থেকে না । বাসায় ডুকলে শুরু হয় গালাগাল এত সুন্দরী মানুষ যার রুপ এবং সৌন্দর্যর পাগল হয়ে আপন বাবা মা ভাই বোন দের থেকে দূরে বহু দূরে রেখে ঘর বাঁধে।সেই সুন্দর মানুষটির , সেই সব চেয়ে প্রিয় মানুষটি এমন নোংরা ও অকথ্য ভাষায় বকা শুনবে জীবনে একবার ও ভাবেননি।
ভাগ্যের পরিহাস না যায় খন্ডন। ঐ কুটনী মহিলা নতুন বাসা নিয়ে তার নিজের বাসায় চলে গেলেও যোগাযোগ অব্যহত রেখেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
এর মাঝে আঁশে পাশের সবাই ঘটনা জানছে। সোসাল সার্ভিস এসে ঘটনা সমাপ্তি করতে চাচ্ছে কিন্তু স্ত্রী কারো কোন কথাই শুনতে রাজি নয় । অহেতুক সন্দেহ করে তার সাথে সংসার না করার সিদ্ধান্ত অটল থাকে।
একদিন ঝগড়া চরমে পৌছে স্বামী বিচারা তার প্রিয় সব চেয়ে প্রিয় মানুষটির গায়ে হাত তোলে। এ যেন সোনায় সোহাগা । মেঘ না চাইতেই বৃস্টি । ঘটনা স্থলে পুলিশ আসে । সোসাল সার্ভিসসহ সহ অন্যান্য বহু সংস্থার লোক আসে। আজ সবাই সুন্দর স্ত্রীর পক্ষে। স্ত্রী এবং সন্তানদের সোসাল সিকিউরিটি হিসেবে সোসাল সার্ভিস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি টু বেডের বাসা দেওয়া হয়।
আপনারা জানেন এদেশে যদি একবার সোসাল সার্ভিলের লোক আপনার সংসারে প্রবেশ করে তবে আপনার একূল ঐকূল দুই কূলই যাবে। ব্রিটেনের আইন সব সময় মহিলাদের পক্ষে। কিন্তু স্বামী বা পুরুষরা অন্যায় না করেও অপরাধী হবেন।
এর দায় কার ? সরকারের না আইনের?
স্ত্রী এবং ১৮ বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্য সরকারে যত সহযোগিতা আছে। একজন পুরুষ অন্যায় না করেও কি কোন সহযোগিতা পেতে পারে?
স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অপরাধে স্বামীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
স্ত্রীকে কান পড়া দিতে দিতে স্বামীকে স্বন্দেহ করালেন?
কিন্তু তার কি কোন লাভ হয়েছে?
কি পেয়েছেন?
হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কিন্তু এমন একটি সুখের সংসার নিমিষেই ভেঙে খান খান হয়ে গেল।
অন্যের পরামর্শ, ভাবীদের আড্ডা , সোসাল সার্ভিসের সহযোগিতা এবং আইন মহিলাদের পক্ষে সহজ হওয়ার সংসারে বিচ্ছেদের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে।
স্বামী হয়তো পুলিশ স্টেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন?
কিন্তু ফিরে পেয়েছেন কি? সন্তানদের আদর?
সাজানো সুখের সংসার?
পর্ব -৩