মো: রেজাউল করিম মৃধা: কভিড-১৯ বা করোনাকালে প্রথম লক ডাউন এবং পরবর্তীতে লক ডাউন তুলে নেওয়ার পর সরকারী যে সব নিয়ম নীতি দেওয়া হয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চার্চ, সিনেগগ, মসজিদ এবং মন্দির সহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় গুলি। এরপরও করোনাভাইরস মহামারি ঠেকাতে পাব, বার, রেস্টুরেন্ট এবং ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সাথে ধর্মীয় উপাসনালয় গুলিও দ্বিতীয় লক ডাউন ৫ই নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছে বৃটিশ সরকার।
এদিকে প্রাইমারি স্কুল, সেকেন্ডারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিস্ঠান দ্বিতীয় লক ডাউনে খোলা থাকবে অথচ যেখানে সরকারী নিয়মনীতি বেশী মানা হয়েছে সেই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকবে। এই সরকারী ঘোষনাটি নেমে নিতে পারছেন না সকল ধর্মের মানুষগুলি।
দ্বিতীয় দফায় জাতীয় লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যান্ডের শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা।
দ্বিতীয় দফায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে ৫ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইংল্যান্ডে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। প্রথম দফা লকডাউনের মতো দ্বিতীয় দফা লকডাউনেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর প্রতিবাদে চার্চ অব ইংল্যান্ড, ক্যাথলিক চার্চ, জুইশ, মুসলিম, হিন্দু, শিখসহ অন্যান্য ধর্মের শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষরিত এক যৌথ চিঠিতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা বিস্তার ঠেকাতে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বা সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার পক্ষে বিজ্ঞানসম্মত কোনো যুক্তি নেই। কেননা শিক্ষা প্রতিস্ঠান খোলা থাকবে অথচ ধর্মীয় প্রতিস্ঠান বন্ধ।
প্রথম দফায় লকডাউনের পর করোনা ঝুঁকিমুক্ত এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া চার্চ, সিনেগগ, মসজিদ এবং মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা সবার অন্তরে সাহসের সঞ্চার করে এবং করোনা মহামারীতে একের অন্যের পাশে দাঁড়াতেও সহযোগিতা করে আসছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব নানান যুক্তি দেখিয়ে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আইনী লড়াইয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমবেতনা প্রার্থনার উপর দ্বিতীয় দফা লকডাউনে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে কনজারভেটিভ পার্টি সমর্থিত ফেইথ গ্রুপ ক্রিশ্চিয়ান কর্নার আইনী লড়াইয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন জরুরী ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবার আগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পরামর্শ গ্রহণ না করার সমালোচনাও করেছে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিস্ঠানের নেতারা।
প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিস্ঠান সরকারে নিয়মনীতি গুলো সঠিক ও সুস্ঠু ভাবে নেমে চলছে।ব্রিটেনের মাত্র কয়েক দিন পূর্বে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা পালিত হলো এখানে সবাই সরকারের নিয়মনীতি নেমে , মুখে মাক্স , স্বল্প সংখ্যক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই করেছেন।
মসজিদ গুলিতে সবচেয়ে বেশী সরকারী নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে। মসজিদের প্রবেশ পথে ও দূরুত্ব বজায় রেখে সারি বন্ধ ভাবে দাঁড়ান এবং একজন একজন করে তাপমাত্রার ম্যাশিন পরীক্ষা করে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। মুখে মাক্স ,বাসা থেকে ওজু করে আসেন নিজের জায়নামাজ নিজে নিয়ে আসেন সাথে জুতা রাখার ব্যাগ। মসজিদে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে চিন্হিত নির্দিস্ট স্থানে নিজের জায়নামাজ বিছিয়ে শুধু মাত্র ফরজ নামাজ আদায় করে আবার সারি বন্ধ ভাবে মসজিদ থেকে বেডিয়ে বাসায় চলে যান । এভাবে প্রতিটি উপাসনালয় সরকারী নিয়ম নীতি পালন করে।এক শতর্কতার পরও দ্বিতীয় লক ডাউনে মসজিদ সহ ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ রাখতে সরকার ঘোষনা দিয়েছে।
সরকার এই ঘোষনা থেকে ফিরে না আসলে সকল ধর্মীয় প্রতিস্ঠানের পক্ষে থেকে আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারকেও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।
তবে সরকার সকল ধর্মপ্রান মানুষ জনসাধারন সহ সকলকে সরকারি বিধিনিষেধ ও নিয়মনীতি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। সরকার বলছে,
“বাসায় থাকুন, নিজে সুস্থ্য থাকুন , অপরকে সুস্থ্য থাকতে সহযোগিতা করুন”।