বগুড়ার একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে সুব্রতচন্দ্র দাস ওরফে সম্রাট দাস (২৭) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত রবিবার রাত ১টার দিকে শহরতলীর সাবগ্রাম হাটের দুর্গা মন্দিরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে। নিহত সম্রাট সাবগ্রাম পালপাড়ার কালিপদ দাসের ছেলে এবং সাবগ্রাম বন্দর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৫ সালে যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মানিককে হত্যা মামলারও প্রধান আসামি তিনি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, বালু ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য নিয়ে মন্দির কমিটির সম্পাদক অতুলচন্দ্র দাসের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সম্রাটকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সম্রাটের নামে যুবলীগ নেতা মানিক হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি বালু ব্যবসা নিয়ে তার সঙ্গে সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও ওই মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অতুলচন্দ্র দাসের বিরোধ হয়। তিন মাস আগেও সম্রাটের বিরুদ্ধে সাবগ্রাম এলাকায় অতুলের নেতৃত্বে মানববন্ধন করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এর পর থেকে সম্রাট এলাকা ছেড়ে বগুড়া শহরে বসবাস শুরু করেন। তার বড় ভাই জুয়েল দাস ওরফে হাড়ি জুয়েলও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সম্প্রতি জামিনে কারামুক্ত জুয়েল ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। সেই থেকে সাবগ্রাম এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। অতুল ও সম্রাট বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এলাকায় ছিল ব্যাপক প্রভাব। দুজনই পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সরকার দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ছিল তাদের সখ্যতা। কিছুদিন আগে সম্রাটের সঙ্গে বিরোধ হয় অতুলের। তখন অতুলের পক্ষ নেন সরকার দলের স্থানীয় কিছু নেতা।
এলাকাবাসী জানায়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে রবিবার রাতে সম্রাট গোপনে বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত ১টার দিকে মন্দিরে যান প্রতিমা দর্শনে। এদিকে প্রতিপক্ষের লোকজন খবর পেয়ে সাবগ্রাম হাটের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। প্রতিমা দর্শন শেষে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মন্দির চত্বরে ওপর অতুল ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সম্রাটের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করলে আত্মরক্ষার্থে মন্দির চত্বরে একটি টিন শেডের ঘরে আশ্রয় নেন তিনি। দুর্বৃত্তরা সেখান থেকেও তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে কুপিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন সম্রাটকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, ঘটনার পর পরই এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু জড়িতদের পাওয়া যায়নি। তবে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে সম্রাট ও তার সঙ্গীদের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নিহত সম্রাটের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্রসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে বলেও জানান ওসি হুমায়ুন।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাবগ্রাম বন্দর যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি মনিরুজ্জামান মানিককে ২০১৫ সালের ৫ জুন সাবগ্রাম হাটে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের মামলায় সম্রাটকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া মানিক হত্যা মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ শাকিলকে গত ১২ জুন বগুড়া শহরের নারুলী আকাশতারা এলাকায় দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।