গতকাল যেখানে শেষ হয়েছিল সেখানেই ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের ফল। ২৬৪-২১৪ ইলেকটোরাল ভোটের পরিসংখ্যান থেমে আছে রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলার কারণে। পাঁচ রাজ্যে এখনও চলছে ভোট গণনা। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, নির্বাচন ফল পেতে লেগে যেতে পারে সপ্তাহ খানেক।
পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, নেভাদা এবং আলাস্কার রাজ্যে জয় পেতে ট্রাম্পকে অর্জন করতে হবে সবগুলোর ভোট। অপরদিকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসতে বাইডেনকে পেতে হবে ৬ ভোট। একটি রাজ্যে এগিয়ে আছেন এ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, আরেকটিতে এগিয়ে এসেছেন। ব্যবধান এতটাই কম যে, যে কেউ জয়ী হতে পারেন।
বিভিন্ন দেশের ও সংবাদমাধ্যমগুলোর চোখ আটকে আছে মূলত নেভাদায়। নির্বাচন বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোও বিশেষ নজর রাখছে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও পেনসিলভানিয়ার জয় ট্রাম্প বা বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলের মূল প্রভাবক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
আমাদের সময়’র নিউইয়র্ক প্রতিনিধি কৌশুলী ইমা জানিয়েছেন, নেভাদায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা খুবই প্রবল। এমনকি জর্জিয়ায় যে কোনো মূহুর্তে এ রাজ্যে জয় পেতে পারেন তিনি। ইমেইল বা ডাকযোগের হাজার হাজার ভোট বাদ পড়ে গেছে সময়ের কারণে। ভোটের সময় শেষ হওয়ায় পড়া ভোট গুলোর গণনা হবে না। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও ৪ রাজ্যে পিছিয়েও পড়তে পারেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ভোট গণনা বন্ধে যে মামলা করেছেন, সে কারণে ভোটের ফলাফল জানায় সময় গড়াতে পারে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত।
জো বাইডেন অ্যারিজোনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন। গত বুধবার রাজ্যের নির্বাচন গণনা কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, তাদের সবচেয়ে বড় কাউন্টি ম্যারিকোপা এখনও ২ লাখ ৭৫ হাজার ভোট গণনা বাকি আছে। গণনা শেষ করে এ ফল ঘোষণা করতে সময় লাগতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
এ ছাড়া বাকি আছে এ রাজ্যের পিমা কাউন্টির ৪৬ হাজার ভোট গণনা। অঙ্গরাজ্যটি গণনাকৃত ৮৬ শতাংশ ভোটের মধ্যে বাইডেন পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। ১১টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে এ রাজ্যে। যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জয় পাবেন, তিনিই ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। বাইডেন পেলে অন্য রাজ্যের ভোট প্রয়োজন হবে না প্রেসিডেন্ট হতে।
ভোটের ৯৮ শতাংশ গণনা হয়েছে জর্জিয়ায়- বাইডেন পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। এ অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ১৬ ইলেকটোরাল ভোট। বেশ কয়েকটি মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে- ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও সঠিক উপায়ে ভোট গণনা হলে জিতবেন বাইডেন।
সর্বশেষ রাজ্যের ফুলটন কাউন্টির আটলান্টা এলাকা বাইডেনের বাক্সে যোগ হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ ভোট। গণনার বাকি থাকা ভোটগুলোও তিনি পেতে পারেন বলে ধারণা রাজ্যের নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের। ৭ হাজার ৫৬৪ ভোট এখনো গণনা বাকি।
গত বুধবার শেষ মুহূর্তে এসে ২০ ইলেকটোরাল ভোটের পেনসিলভানিয়ায় লড়াই জমে উঠেছে। ৯৩ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে এ রাজ্যে। বাইডেন পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। অথচ দুজনের ভোটের ব্যবধান এক সময় ছিল প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার। এখানকার ডাকযোগে আসা কয়েক লাখ ভোট এখনো গণনার বাইরে রয়েছে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ।
নেভাদায় ট্রাম্প থেকে মাত্র ১২ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। রাজ্যের ক্লার্ক কাউন্টির ফল আসা বাকি। ৬টি ইলেকটোরাল ভোটের এ রাজ্যই ভাগ্য বদলে দিতে পারে বাইডেনের।
নর্থ ক্যারোলাইনার ৯৫ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। ট্রাম্পের বাক্সে গেছে ৫০ শতাংশ, বাইডেন ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দুজনের মধ্যে ১ দশমিক ৪ শতাংশ থাকলেও এখনো ৫ শতাংশ ভোট গণনা বাকি। যেকোনো সময় পরিস্তিতি পাল্টে যেতে পারে। অঙ্গরাজ্যের ১৫টি ইলেকটোরাল ভোট চলে যেতে পারে যে কারও কাছে।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর খবরে আবছাভাবে বোঝা যাচ্ছে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে মার্কিন কর্তা। তবে সেখানকার ভোট নিয়ে আগাম চিন্তা কিছুটা কঠিন। নেভাদায় জয় পেলে নতুন প্রেসিডেন্ট হবেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট পদ ধরে রাখতে ট্রাম্পের জয় করতে হবে ৫ রাজ্যের সবগুলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো থেকে প্রাপ্ত খবরে বোঝা যাচ্ছে, খুব সহজে ফল পাওয়া যাবে না। কারণ, ট্রাম্পের মামলার কারণে ভোট গণনা স্তিমিত হয়ে গেছে। দেশটির নির্বাচন বিস্লেষকরা মনে করছেন, সবগুলো ভোট সুষ্ঠুভাবে গণনা শেষ হয়ে জয় পেতে পারেন বাইডেন।