করোনার অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত সব ধরনের উদ্যোগ, আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার। আগামীকাল রবিবার মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনের পরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। অবশ্য রোহিঙ্গা সংকটের শুরু যে রাখাইন রাজ্যে সেখানকার ২৯টি আসনের মধ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অজুহাতে ১৬টিতেই নির্বাচন হচ্ছে না।
গত মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বেইজিংয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন। চীনের প্রস্তাবিত ওই বৈঠকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে উপস্থিত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা মনে করে সু চির উপস্থিতি ছাড়া কোনো আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বেইজিংয়ে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন। মূলত রোহিঙ্গা সমস্যার হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাবিত ওই বৈঠকে আলোচনা হবে। বৈঠকের সময়সূচি চীন ঠিক করবে।
আবদুল মোমেন আরও বলেন, আমরা তো এ বৈঠকে যেতে রাজি আছি। তবে চীনের রাষ্ট্রদূতকে প্রস্তাবিত বৈঠকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে উপস্থিত করানো উচিত বলে জানিয়েছি। তিনি না হলে হবে না। রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর এ উদ্যোগে ভারতকেও পাশে চায় ঢাকা। প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য এ সংক্রান্ত ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার) প্রক্রিয়ায় দিল্লিকে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য প্রত্যাবাসন। এ জন্য আসিয়ান প্লাস প্লাস দেশগুলোর সহায়তা আমরা চেয়েছি। আসিয়ান ছাড়া নিকট প্রতিবেশী চীন ও ভারত এবং দূরবর্তী প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলে এটি আরও কার্যকর হবে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি এ উদ্যোগে শামিল হওয়ার জন্য। তারা যুক্ত হলে আমরা স্বাগত জানাব।
একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে জানিয়ে সচিব বলেন, ফিরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা আনা প্রয়োজন এবং বেশি সংখ্যক দেশ সম্পৃক্ত হলে এ আস্থা অর্জন সহজ হবে। মিয়ানমারের ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশ তীক্ষ্ণ নজর রাখছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা আশা করি নির্বাচনের পর ওই দেশে গণতন্ত্র সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। নির্বাচনের পর যে উদ্যোগগুলো থেমে আছে সেগুলো নিয়ে এগিয়ে যাব।
শেষ দফায় ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানে জোর দিয়ে আসছে চীন। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছিল চীন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য ত্রিপক্ষীয় একটি কমিটিও হয়। কিন্তু কয়েক দফা বৈঠক হলেও এতেও শেষ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি দিন ঠিক ছিল। কিন্তু রাখাইনে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরতে চায়নি। এ কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় দফার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বিশেষ করে প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি নেই। থমকে আছে চীনের মধ্যস্থতার উদ্যোগও।