মো: রেজাউল করিম মৃধা: মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে নতুন রেফারেন্ডাম হতে যাচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে। সোমবার রাতে টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার গ্রুপের বৈঠকে রেফারেন্ডামের পক্ষে ভোট দেন দলীয় কাউন্সিলাররা। বৈঠকে মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে বারায় নতুন রেফারেন্ডামের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মেয়র জন বিগস। বৈঠক শেষে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস জানিয়েছেন, আগামী বছরের মে মাসে টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে নতুন রেফারেন্ডাম হবে।
রেফারেন্ডামে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র না লিডার বা কেবিনেট সিস্টেম, এই দুটি সিস্টেমের মধ্য থেকে একটি সিস্টেম বেছে নিতে হবে বারার জনসাধারনকে ভোটের মাধ্যমে। যে সিস্টেমে বেশী ভোট পাবে পরবর্তীতে সেই সিস্টেমে কাউন্সিল পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য ২০১০ সালে সাধারণ নির্বাচনের সময় বারায় প্রথম এই সিস্টেম নিয়ে রেফারেন্ডাম হয়েছিল। রেফারেন্ডামে মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে ভোট দিয়েছিল বারার জনগন। পরবর্তীতে একই বছরের ২১শে অক্টোবর বারায় প্রথম মেয়রাল নির্বাচন হয়।নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন লুৎফর রহমান।
যদিও টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার গ্রুপ সব সময় লিডারশীপ সিস্টেমের পক্ষে ছিল। তবে ২০১০ সালে ভোটের মাধ্যমেই মেয়রাল সিস্টেম হয়।এ নিয়ে নানা নাটকও হয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টিতে।তবে লেবার পার্টি সিদ্ধান্ত নিলে আইন পাশ করতে সহজ হবে। কেননা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে লেবার পার্টি সংখ্যা গরিস্ঠ। লেবার পার্টি পক্ষেই জনগন বেশী।
তবে রেফারেন্ডেম বা নির্বাচনে যদি নির্বাহী মেয়রর সুবিধা এবং অসুবিধা গুলি পরিস্কার এবং বিষোঁধ ভাবে তুলে ধরতে হবে। সেই সাথে লিডারশাপের কাজের সুবিধা অসুবিধা গুলিকে ও জনসাধারন বা ভোটারদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। সেই সাথে ম্যানুফেসতো বা কাজ গুলিকে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরলে জনসাধারনের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
লেবার গ্রুপের এই প্রস্তাবটি আসন্ন কাউন্সিল মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হলেই আগামী বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য লন্ডন মেয়র নির্বাচনের সাথে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে বর্তমান মেয়রাল পদ্ধতির বিপক্ষে বেশী ভোট পড়লে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পুনরায় লিডারশীপ পদ্ধতিতে ফিরে যাবে।
আর পক্ষ জয়ী হলে বর্তমান মেয়রাল পদ্ধতি বহাল থাকবে।
মেয়র জন বিগস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “১০ বছর আগে গণভোটের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়রাল পদ্ধতিতে গিয়েছিলো। এই এক দশকে এখানে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। আমার মেয়াদের বেশীরভাগ সময়ই কেটেছে পূর্বসূরীর ক্ষতি সারিয়ে তুলতে।কোন শাসন পদ্ধতি ভাল তা আরেকবার যাচাই করে দেখার জন্য টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের এটাই সঠিক সময়। সর্বোপরি, আমাদেরকে সবার আগে সুশাসন ও জবাবদিহিতাকে প্রাধান্য দিতে হবে”।
যদিও মেয়রাল সিস্টেম নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস বারাব বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বিধা দন্দ আছে। পক্ষে বিপক্ষে আছে নানামত।এই সকল দ্বিধা দূর করতে গনভোট বা রেফারেন্ডমই হচ্ছে উত্তম পথ। তবে যদি কোন সিস্টেম জনসাধারনের জন্য সুফল বয়ে আনবে ? তার জন্য অবশ্যই চাই সুস্ঠু ,সুন্দর ও পরিস্কার ধারনা । এই পরিস্কার ধারনা দেওয়ার জন্য কাউন্সিলের যেমন দায়িত্ব আছে। তেমনি দায়িত্ব আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলির। নির্বাচনের পূর্বেই শুধু জন সেবা কথা বললে হবে না নিয়ম বা সিস্টেম পরিবর্তন বা আইন প্রনয়নের সময়ও আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বিজ্ঞ জনেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত কেউ কেউ মনে করেন, মেয়রাল সিস্টেম ভালো এ জন্য যে কোন কাজ সহজে এবং দ্রুত করা যায়। কাউন্সিলার বা কাউন্সিলে সিদ্ধান্তকে তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। মেয়র তার নির্বাহী ক্ষমতা বলে অনেক ভালো কাজ করতে পারেন আবার কাজের দায়দায়িত্ব ও নির্বাহী মেয়রের কাছেই বর্তায়। তার উদাহরণ আপনারা দেখেছেন।
আবের লিডারশীপ সিস্টেমে কাজের অনেক ধীর গতি কোন কাজ হাতে নিতে বা আইন পাশ করতে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। তবে এর দায় ভার বহন করে পুরো কাউন্সিল।
সিস্টেম পরিবর্তন হলেও জনগনের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন নেই।পরিবর্তন শুধু নেতার। কথায় আছে যে লাউ সেই কদু । অথবা মূদ্রার এপিঠ এপিঠ ।জনগন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে আর হাততালি দিবে। তারপর ও জনগনের ভোটের অধিকার দেওয়া হবে সেটাইবা কম কিসের।
২০২১ সালের মে মাসে লন্ডন মেয়র নির্বাচনের দিনই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে হবে গনভোট বা রেফরেন্ডম । টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার পার্টির মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয়েছে মেয়রাল সিস্টেম না রেখে লিডারশী সিস্টেমে যাওয়ার জন্য। লেবার পার্টির সিদ্ধান্ত হলেও কাউন্সিলের ফুল মিটিং এ সকলের মতামত নিয়ে পাশ করাতে হবে। তবেই সেটা আইনে পরিনত হবে।
যদিও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে লেবার পার্টি সংখ্যাই বেশী।তাই কোন আইন পাশ করতে তেমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়না।এ ক্ষেত্রেও তেমন সমস্যা হবে না। আইন পাশ হলেও গনভোটের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল মেয়রাল সিস্টেমে চলবে না লিডারশীপ সিস্টেমে চলবে।জনগনের ভোটেই আইন পাশ করা হবে। একেই বলে জনসাধারনই সকল ক্ষমতার উৎস।