পাবনায় শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও বেশ ভালোই পাচ্ছেন চাষিরা। পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রবিশস্য ও শীতকালীন সবজিসহ মৌসুমি ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এসব এলাকায় উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও বাজারজাত করা হচ্ছে।
পাবনা সদরের মনোহরপুর, দাপুনিয়া, ঘরনাগড়া, রানীগ্রাম, চাঁদপুর, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, ছলিমপুর, বাঁশেরবাদা, আটঘরিয়ার চাঁদভা, পারখিদিরপুর, খিদিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠে সবজির সমারোহ। চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজির পরিচর্যায়। ভোররাত থেকেই জমি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে হরেক রকম সবজি। ভোরেই তোলা হচ্ছে হাট-বাজারে নতুবা দেওয়া হচ্ছে পাইকারদের হাতে।
সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিদেশ ফেরত সাইফুল ইসলাম। দেশে এসে কৃষি কাজে মনোযোগী হয়েছেন। মৌসুমি সবজি ও সাথী ফসল ফলান তিনি। এবারও বেশ কয়েক বিঘা জমি লিজ নিয়ে শীতকালীন নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। ইতোমধ্যে বেগুন, শসা, মুলা, ফুলকপি ও বিভিন্ন ধরনের শাকের আবাদ করেছেন। ভালো দামও পেয়েছেন। সবজির এ বাজারই যেন তাকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে।
পাবনা সদরের দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাদিয়ারের কৃষক নায়েব প্রামানিক বলেন, ষাটের ঘর পার করেছেন কৃষি কাজ করে। শীতকালীন সবজি চাষই তার জীবনের মূল চালিকা শক্তি। শীতকালীন এই মৌসুমি সবজি তাকে স্বপ্ন দেখায়। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদে সাড়ে ৬ হাজার চারাগাছের প্রয়োজন।
তার দাবি, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সবজি বাজারে তুলতে পারলেই লাভের মুখ দেখবেন। নতুবা তাকে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হতে হবে।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া গ্রামের কৃষক ওহিদুর ইসলাম জানান, সাড়ে চার বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। বুদ্ধির পর থেকেই তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৭০ হাজার টাকা জমি লিজের জন্য আর ৭০ হাজার টাকা ফুলকপি আবাদে ব্যয় করেছেন।
সবজি চাষিরা জানান, মানুষের মধ্যে এক ধরনের অপপ্রচার রয়েছে সবজিতে বিষ প্রয়োগ। আসলে সবজিতে যে বিষ বা কীটনাশক দেওয়া হয়, মূলত সেটা সবজির জন্য পুষ্টি বা ভিটামিন। সবজিকে পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা এবং পুষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সবজি চাষে সব সময় আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমেই বিষ বা কীটনাশক স্প্রে করি।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি সূত্রে জানা যায়, এবারে জেলায় শীতকালিন সবজির মধ্যে লালশাক, মুলা, গাজর, করলা-উচ্ছে, ঢেঁড়স, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়ো, টমেটো, পটল, গীমা কলমি, শিম, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, পুঁইশাক, বেগুন, মটরশাক, শটর শুটি, বরবটি, ডাটা, ধুনেরপাতা, ধুন্দল, চালকুমড়া, ওলকপি, খিরা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শালগম, কাকরোল, কাঁচা কলা ও পেঁপের আবাদ হয়েছে। এবারে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫০ মেট্টিক টন।