এমদাদুর রহমান মিলাদ, বিশ্বনাথ থেকে : সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলার মাহতাবপুর ও রাজাপুর, পরগণার বাজার এলাকার সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রক্ষায় ১২০ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ৪টি ধাপে পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বনাথ অংশের মাহতাবপুর ও পরগণার বাজার এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
গত শনিবার সকালে সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন, সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নদীর এ অংশে ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে কবরস্থান, মাজার, মসজিদ, বাজারসহ শতাধিক ঘর-বাড়ি। গৃহহারা পরিবারগুলো অন্যত্র বাড়িঘর তৈরী করলেও নদীর ভাঙ্গন যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। ধীরে ধীরে সেইসব বাড়ি-ঘরও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে গৃহহারা হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার।
জানা গেছে, কয়েক বছর পূর্বে মাহতাবপুর গ্রামের পশ্চিম দিকে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসানো হয়। এরপর পূর্ব দিকে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। সেই দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে সিলেট-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরীর আহবানে নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার। পরিদর্শনকালে তিনি ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।
এরপর ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার আহবানে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে আসেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারী মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সঙ্গে নিয়ে লামাকাজী সুরমা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরিদর্শনকালে তিনিও নদীর ভাঙন রক্ষায় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান। এরপর নদীর তীর ভাঙন রোধে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়-এর পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণ করা হয় । ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর লামাকাজী বাজারে একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপিও নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন । তাঁর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাবস্থায় ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর লামাকাজী এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন রক্ষায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১২০ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়।
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এনামুল হক এনাম মেম্বারের সভাপতিত্বে ও মেম্বার ফয়সল আহমদের পরিচালনায় গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি মোকাব্বির খান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে জনগণের কল্যাণে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম নিলয় পাশা, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, সমাজসেবক আব্দুস শহীদ, লামাকাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য চমক আলী, মো. নুরুজ্জামান, মকসুস আহমদ মিলন, হেলাল আহমদ, বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, সদস্য নূর উদ্দিন, সংসদ সদস্যের একান্ত সহকারী কয়েছ মিয়া, এপিএস অসিত রঞ্জন দেব, সাংবাদিক আশিক আলী, নবীন সুহেল, আক্তার আহমদ সাহেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।