সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পক্ষে আইনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন অ্যাড. মো. মিসবাউর রহমান আলম।
তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইনি সহায়তা পাওয়া প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনও কারণে আসামি পক্ষ আইনজীবী পেতে ব্যর্থ হলে বিচার প্রক্রিয়া থমকে যাবে। আর এতে করে বিচার প্রার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমার শ্রদ্ধাভজন সিনিয়রকে জড়িয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আমি আকবরের পক্ষে আর লড়ছি না।
তিনি আরও বলেন, পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই মামলাটি গ্রহণ করি। হেফজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের মামলাটি আমার কাছে একেবারেই নতুন ও চ্যালেঞ্জের ছিল।
গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ ৪ পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।
বরখাস্তকৃতরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। তবে ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে তদন্ত করে পিবিআই।
গেল ১৪ অক্টোবর তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। এরপর গত ১৫ অক্টোবর মরদেহ কবর থেকে তোলে পুনঃময়নাতদন্ত করে পিবিআই।
নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। লাঠি দ্বারা করা এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের চিহ্ন। আর অতিরিক্ত আঘাতের কারণে শরীরের ভেতর রগ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলেও রিপোর্টে উঠে আসে।
৯ নভেম্বর দুপরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তে আকবর হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কানাইঘাট থানা থেকে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশের একটি দল তাকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাতেই তাকে পিআইবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।