মো: রেজাউল করিম মৃধা: কভিড-১৯ বা করোনাভাইরস মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭০ হাজারেরও বেশী মানুষ। প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা কে যে কখন আক্রান্ত হবেন? কখন মারা যাবেন? সেই আতংকে আতংকিত আমরা সবাই।
২০১৯ সালের নভেম্বর চীনের উহান থেকে করোনাভাইরসের উৎপত্তি বা সংক্রামন শুরু হয়ে সারা বিশ্বকে আতংকিত করে তুলছে। কেউ বলছেন মানুষের সৃস্টি আবার অনেকেই মনে করেন আল্লাহর গজব। যেটাই হোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্ব থেকে অকালে ঝড়ে গেছেন ১৭৪৯২৩৫ ডন প্রাণ। এর মধ্যে ব্রিটেনে ৭০ হাজারের ও বেশী । নতুন এক তথ্যে দেখানো হচ্ছে ব্রিটেনে মারা গেছেন ৮০ হাজারের ও বেশী মানুষ।
এই ব্যবধানটি অদৃশ্য হয়ে যায়নি এবং মার্চ মাসে মহামারীটি শুরু হওয়ার পর থেকে মোট অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিমাণ ৮১,৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
শুক্রবার সরকারী কোভিডের মৃত্যুর সংখ্যা ৭০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে, কারণ ক্রিসঅমাসের দিনেও এই ভাইরাসে আরও ৫৭০ লোক মারা গেছেন।
করোনা ভাইরাসের জন্য ইতিবাচক পরীক্ষার ২৮ দিনের মধ্যে এখন মোট ৭০,১৯৫ জন মারা গেছেন। ইতিমধ্যে, গত ২৪ ঘন্টা ৩২.৭২৫টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে, অর্থাৎ সপ্তাহে ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন পরিসংখ্যানগুলি স্বাস্থ্য ও সামাজিক যত্ন বিভাগ থেকে এসেছে এবং হাসপাতাল, কেয়ার হোমস এবং সম্প্রদায় সহ সমস্ত সেটিংসে মৃত্যুর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
লন্ডনের নতুন কোভিড আক্রান্তের হার মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে, জনস্বাস্থ্য ইংল্যান্ড বলেছেন,
“রাজধানীতে কোবিডের ৬০২.২ কেস ছিল প্রতি ১০০,০০০ এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ,এর আগে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেস হার ছিল ২০০.৩ । একই সময়কালে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে রেট বেড়েছে।
পূর্ব ইংল্যান্ড লন্ডনের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার রেকর্ড করেছে , প্রতি ১০০,০০০ লোকের মধ্যে ৪৪০.৭ কেস ।দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে প্রতি ১০০,০০০ লোকের মধ্যে ৩৮০.৬ সংক্রমণ ছিল এবং ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস ২১৮.৮ ছিল ।
জনস্বাস্থ্য ইংল্যান্ড প্রকাশ করেছে, ইংল্যান্ড জুড়ে হারও সকল বয়সের গ্রুপে বেড়েছে। ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, যেখানে সাত দিন থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০,০০০ লোকের মধ্যে ৪৩৩.৮ কেস দাঁড়িয়েছে, সপ্তাহের আগের ২৬৭.২ এর তুলনায় বেড়েছে।
বৃটেনের প্রধান বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যাল্যান্সও হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃটেনের সর্বত্রই নতুন এই স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রফেসর ওয়েস্টও এখন তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অতুন এই স্ট্রেইন থামাতে কঠিন লকডাউনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি সরকার পূর্ব এশিয়ার মতো কন্টাক্ট ট্রাকিং সিস্টেম চালু করতে না পারে তাহলে বৃটেনকে অর্থনীতি এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে”।
গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমাদের উচিত আমাদের কৌশল পুনরায় নির্ধারণ করা এবং নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণ শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা। একে হয়ত অনেক ব্যায়বহুল লাগছে তবে অন্য কোনো বিকল্পের ওপর আর ভরসা করা যায়না।
বৃটেনজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ধরণের করোনা ভাইরাস। নতুন রূপের এই করোনার প্রাদুর্ভাবে মহা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে বৃটেন। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেন আগের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশী সংক্রামক। ইতোমধ্যে লন্ডন সহ বেশীরভাগ এলাকা কঠোর বিধিনিষেদধ টিয়ার-৪ এর আওতাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেটি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত বিস্তারকারী নতুন ধরণের ভাইরাসকে আগুনের সাথে তুলনা করেছেন। ইংল্যান্ডরে “‘আগুনে পোড়া’” থেকে বাঁচাতে পরিপূর্ণ জাতীয় লকডাউনের আহ্বান জানিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের (ইউসিএল) অপারেশনাল রিসার্চের প্রফেসর ক্রিস্টিনা পেজেল তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতিটি অবিশ্বাস্যরকম বিপজ্জনক”।
বিশ্বে প্রথম ভ্যাকসিন অনুমোদনকারী দেশ হিসেবে বৃটেন অবশ্য ইতোমধ্যে ৫ লক্ষাধিক মানুষকে ফাইজার/বায়োএনটেক ভ্যাকসিন প্রয়োগে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু রূপান্তরিত কোভিড-১৯ ভেরিয়েট নিয়ন্ত্রণে তা কতটুকু সক্ষম হবে?
তা নিয়ে প্রশ্ন দেখাদিয়েছে।ভ্যাকসিনেও ভরসা পাচ্ছেন না ব্রিটেনের জনসাধারন । তবে সরকার আপ্রান চেস্টা করছে। এবং সরকারি বিধিনিষেধ বা নিয়মনীতি গুলি মেনে চলুন।
১/ ঘরে থাকুন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেড় হবেন না। কোন বাসায় যাবেন না এবং কাউকে আপনার বাসায় আসতে দিবেন না।
২/ বারবার হাত পরিস্কার করুন।
৩/ মুখে মাক্স পরুন।
৪/ গ্যাদারিং পরিহার করুন।
৫/ সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখুন।
নিজে সুস্থ্য থাকুন , অপরকে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করুন।