নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস ব্রিটেনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ এত দ্রুত বাড়ছে যে, সরকারি হিসাবেই ইংল্যান্ডে এখন প্রতি ৮৫ জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখের বেশি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে লন্ডনে। কিন্তু লন্ডনের স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, সংক্রমণের ভীতি বাড়লেও মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। লোকজনকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বিবিসি।
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের (এনএইচএস) কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার একটি জিপি সেন্টার বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, টিকা কর্মসূচির প্রথম সপ্তাহেই তারা টিকা নিয়ে মানুষের সন্দেহ, বিভ্রান্তি এবং আপত্তির মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ফোন করে টিকা নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি, অনেক মানুষ গড়িমসি করছেন, নানা প্রশ্ন করছেন। অনেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যানও করছেন।’ ব্রিটেনে গত ১৫ ডিসেম্বর ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ৮০ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
মোস্তফা ফারুক জানান, প্রথম সপ্তাহে টাওয়ার হ্যামলেটসের ৩৬টি জিপি সার্ভিসের মাধ্যমে ৮০ বা তার বেশি বয়সী ৯৩৫ জনকে টিকা দেওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপত্তি ও অনীহার কারণে লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। ফলে বেঁচে যাওয়া টিকাগুলো চিকিৎসক, নার্স বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে চিকিৎসকরা নিজেরাই তাদের বাসায় ফোন করেছেন। কিন্তু তার পরও অনেকেই টিকা নিতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, একজন স্বাস্থ্যকর্মী একদিনে ২৫ জনকে ফোন করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় সাতজনই সরাসরি টিকা নিতে অস্বীকার করেছেন। বাকি পাঁচজন নানা কারণে আসতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন।
একই কথা বলেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার সমাজকর্মী নবাব উদ্দিন। তিনি ইস্ট হ্যানডস নামের একটি দাতব্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত। নবাব উদ্দিন জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ওপর পরিচালিত সংক্ষিপ্ত একটি জরিপে তারা দেখেছেন, কোভিড এবং এর টিকা নিয়ে তাদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি-সন্দেহ কাজ করছে।
ওই জরিপের ৬৫ শতাংশই বলেছেন, টিকা নেবেন কিনা তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নন। তারা অপেক্ষা করে দেখবেন। তিনি বলেন, সমাজের কিছু অংশে সঠিক তথ্যপ্রবাহের দারুণ ঘাটতি রয়েছে। মানুষের ভেতরে নানা ধরনের অদ্ভুত সব ধারণা রয়েছে। অল্প শিক্ষার কারণে বিশেষ করে বয়স্করা নিজেরা খবর তেমন পড়েন না বা দেখেন না। অন্যের কাছে শোনেন এবং কানকথা বিশ্বাস করেন, নানা গুজব ঘোরাফেরা করে। তবে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, প্রথম সপ্তাহেই ছয় লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।