ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আজ সোমবার আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আদালতে সাক্ষ্য দেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রয়্যাল রিসোর্টের সিনিয়র গেস্ট রিলেশন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, সুপারভাইজার আবদুল আজিজ ও আনসার সদস্য রতন বড়াল।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর মামলার বাদী কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে জান্নাত আরা ঝর্নাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান মোল্লা ও ওমর ফারুক।
বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন মিয়া, সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌসসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়।
আদালতে নাজমুল হাসান বলেন, গত ৩ এপ্রিল বেলা তিনটার দিকে মামুনুল হক বোরকা পরা এক নারীকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে রয়্যাল রিসোর্টে যান। এরপর এক দিনের জন্য একটি কক্ষ ভাড়া নেন। তাঁরা আসার পৌনে এক ঘণ্টা পর পুলিশ–সাংবাদিকেরা রিসোর্টে গিয়ে মামুনুল হক ও জান্নাত আরাকে কক্ষে আটক করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আধঘণ্টা পর মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টের মূল ফটক, রিসিপশন ও ব্যায়মাগারে হামলা চালান। তাঁরা মামুনুল হক ও জান্নাত আরাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
রিসোর্টের সুপারভাইজার আবদুল আজিজ বলেন, পুলিশ রিসোর্টের ওই কক্ষ থেকে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মাথার চুল, টিস্যুসহ ১৭ প্রকার আলামত জব্দ করে। সেখানে তিনি জব্দ তালিকায় সাক্ষরও করেছেন। হোটেল থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও নিয়ে যায় পুলিশ।
আনসার সদস্য রতন বড়াল বলেন, মামুনুল হক গাড়িতে এক নারীকে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকলে তাঁরা গেট খুলে দেন। পরে তাঁরা কক্ষে ওঠেন। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তাঁদের ছিনিয়ে নিয়ে যান।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মামুনুল হক তাঁর কথিত স্ত্রী জান্নাত আরাকে যেখানে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন, সেই রয়্যাল রিসোর্টের কর্মকর্তা, সুপারভাইজার, গার্ড আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেছেন, পুলিশ এসে যখন মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তখন মামুনুল হক বিয়ের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক ওই সময় স্বীকার করেছেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাত আরাকে ধর্ষণ করেছেন তিনি।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান মোল্লা বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য–প্রমাণে ধর্ষণের বিষয়ে প্রমাণ করতে পারেনি। তারা ঘটনার আগে–পরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাঁকে আবার গাজীপুরে ফেরত পাঠানো হয়।
গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে কথিত স্ত্রী জান্নাত আরাসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতের নেতা–কর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাঁদের ছিনিয়ে নেন।
১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রয়্যাল রিসোর্ট–কাণ্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে জান্নাত আরা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।